«

»

মার্চ 31

জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৬

[নিবন্ধনের লিংক | কোর্সের মূল পাতা]

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৫]

[জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) – লেকচার ৭]

অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ

গত লেকচারে (লেকচার ৫) আমরা ‘অভিক্ষিপ্ত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা’ (Projected Coordinate System) সম্পর্কে প্রারম্ভিক আলোচনা শুরু করেছি। আজকে আমরা ‘অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ (Projection Parameters)’ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে চেষ্টা করব।

১) Central Meridian/ Prime Meridian/ Greenwich Meridian:

ইহা হল একটি দ্রাঘিমাংশ রেখা (মূলত ‘x=0’ থাকে), যা কোন অভিক্ষিপ্ত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার কেন্দ্র এবং x-স্থানাঙ্কের সূচনা বিন্দু (origin of x-values) নির্দেশ করে।

এই সম্পর্কে আমরা লেকচার ৩-এ পড়েছি। তবুও নিম্নের চিত্রের মাধ্যমে আবারও বুঝে নেই।

1

২) Latitude of Origin/ Reference Latitude:

ইহা হল অক্ষাংশের মান (মূলত ‘y=0’ থাকে), যা কোন অভিক্ষিপ্ত স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায়, y-স্থানাঙ্কের মানসমূহের উৎপত্তি/ সূচনা বিন্দু (origin of y-values) নির্দেশ করে।

৩) False Easting:

ক্ষেত্রবিশেষে মানচিত্র অভিক্ষেপের সময়, x-স্থানাঙ্কের সকল মানসমূহের সাথে একটি রৈখিক মান (Linear Value) যোগ করা হয়। যাতে করে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলের (যার মানচিত্র তৈরি করা হচ্ছে) কোন অংশের মান যেন ঋণাত্মক না হয়।

সহজ কথায় ঋণাত্মক মানসমূহকে পরিহার করার জন্য, x-স্থানাঙ্কের সকল মানসমূহের সাথে কৃত্রিম কোন রৈখিক মান যোগ করাকে ‘False Easting’ বলে।

2

৪) False Northing:

ক্ষেত্রবিশেষে মানচিত্র অভিক্ষেপের সময়, y-স্থানাঙ্কের সকল মানসমূহের সাথে একটি রৈখিক মান (Linear Value) যোগ করা হয়। যাতে করে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চলের কোন অংশের মান যেন ঋণাত্মক না হয়।

সহজ কথায় ঋণাত্মক মানসমূহকে পরিহার করার জন্য, y-স্থানাঙ্কের সকল মানসমূহের সাথে কৃত্রিম কোন রৈখিক মান যোগ করাকে ‘False Northing’ বলে।

3

৫) Standard Parallel:

গত লেকচারে আমরা জেনেছি যে ‘Developable Surface’ নামক কাল্পনিক তলের উপর ভিত্তি করে মানচিত্র অভিক্ষেপণের তিনটি মৌলিক পদ্ধতি আছে। এগুলো হল:

  • Azimuthal/ Planar: এক্ষেত্রে কল্পিত কাগজের টুকরাটি হয় ‘সমতল’ আকৃতির।
  • Conical: এক্ষেত্রে কল্পিত কাগজের টুকরাটি হয় ‘মোচাকৃতি’।
  • Cylindrical: এক্ষেত্রে কল্পিত কাগজের টুকরাটি হয় ‘বেলনাকার’।

কাল্পনিক এই তল (Developable Surface) পৃথিবীর যেখানে স্পর্শ  করে, ঠিক সেখানকার অক্ষাংশকে- ‘Standard Parallel’ বলে (নিচের ছবিটি দেখুন)।

4

ইহা অক্ষাংশের (Latitude) সমান্তরাল হয়ে থাকে এবং গোলককে স্পর্শ করে। সাধারণত ‘Conic’ এবং ‘Cylindrical’ অভিক্ষেপে ‘Standard Parallel’ থেকে থাকে।

‘Tangent’-এর ক্ষেত্রে একটি এবং ‘Secant’-এর ক্ষেত্রে দুইটি ‘Standard Parallel’ থাকে। নিচের ছবি ৩ টি দেখুনঃ

567

৬) Scale Factor:

আমরা আগে জেনেছি, মানচিত্র প্রক্ষেপের ফলে ভূগোলকের (Ellipsoid/Sphere) উপর অবস্থিত কোন কিছুর (Feature) বিকৃতি (Distortion) ঘটে।

8

9

Scale Factor-কে নিচের সমীকরণ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়ঃ

10

 

 

 

অর্থাৎ Scale Factor = ১ হওয়া মানে, ঐ মানচিত্র অভিক্ষেপে কোন বিকৃতি নাই। আর ‘Scale Factor’ যদি ১-এর বেশি বা কম হয় তবে বুঝতে হবে যে বিকৃতি আছে। তবে মনে রাখতে হবে ‘Map Scale’ এবং ‘Scale Factor’ কিন্তু একই বিষয় নয়। ‘Scale Factor’ হল বিকৃতি নির্ণয়ের একটি অনুপাত মাত্র।

উদাহরণস্বরূপ ‘Scale Factor’ = ০.৯৯৯৬০ মানে হল, যদিও ‘Ellipsoid’-এ মান ১০০০ মিটার কিন্তু মানচিত্রে তা ৯৯৯.৬ মিটার প্রদর্শন করছে। অর্থাৎ, অভিক্ষিপ্ত মানচিত্রটির প্রতি ১০০০ মিটারে অনুপাতিকহারে ০.৪ মিটার বিকৃতি (সঙ্কোচন) আছে।

‘Tangent’ এবং ‘Secant’ মানচিত্রের তলে, ‘Scale Factor (SF)’ নিম্নরুপ হয়ে থাকেঃ

11

12

উপরের চিত্রে ‘Tangent’-এর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, কেন্দ্রে কোন বিকৃতি নেই এবং অন্যান্য স্থানে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে বিকৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, ‘Secant’-এর ক্ষেত্রে উভয়পাশে বিকৃতি নাই এবং সামগ্রিকভাবে বিকৃতি অনেক কম।

অর্থাৎ ‘Two Standard Parallel’-এর ক্ষেত্রে (যা ‘Secant’-এর সমতুল্য) বিকৃতি অনেক কম থাকে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

13

নিচের ছবিটি হল ‘Conic’ অভিক্ষেপে অস্ট্রেলিয়ার মানচিত্র। বাম পাশেরটিতে ‘One Standard Parallel’ এবং ডান পাশেরটিতে ‘Two Standard Parallel’ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে খুব সহজেই বুঝা যাচ্ছে যে, ‘Two Standard Parallel’ ব্যবহারে ভাল ফলাফল এসেছে। অর্থাৎ ‘Secant’-মানচিত্র অভিক্ষেপে বিকৃতি কম।

14

‘অভিক্ষেপ স্থিতিমাপসমূহ (Projection Parameters)’ সম্পর্কে আলোচনা এইখানে শেষ হল। এর পরের লেকচারে ‘Azimuthal’, ‘Conical’ এবং ‘Cylindrical’ অভিক্ষেপের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ!

Comments

comments

About the author

বায়েস আহমেদ

বায়েস আহমেদ বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের 'Commonwealth Scholarship' নিয়ে 'University College London (UCL)'-এ 'PhD' অধ্যয়ন করছেন। বর্তমানে উনার গবেষণার বিষয় হল - বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধ্বস এবং সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।

এর আগে উনি ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে বুয়েটের ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা’ বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর উনি ২০১১ সালের মার্চ মাসে ‘European Commission’-এর ‘Erasmus Mundus’ বৃত্তি নিয়ে ইউরোপের জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল থেকে ‘Geospatial Technologies’-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

‘GIS’, ‘Remote Sensing’ এবং ‘Spatial Analysis’ বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সাময়িকীতে উনার একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ‘GIS’-এর প্রশিক্ষক হিসাবেও উনার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।

Leave a Reply