«

»

ফেব্রু. 17

জীব জীবন পরিবেশ ৬: পৃথিবীর অতীত

[কোর্সের মূল পাতা] [নিবন্ধন ফর্ম][পূর্বের লেকচার]

গত লেকচারে পৃথিবীর অতীত সম্বন্ধে জানার একটি পদ্ধতির কথা বলেছিলাম, ফসিল দিয়ে। আজকে আমরা দেখবো ডিএনএ থেকেও কিভাবে পৃথিবীর জৈবিক ইতিহাসকে বুঝতে পারি এবং এভাবে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে পৃথিবীর ভৌগলিক ইতিহাসকে কিভাবে ভাগ করে নিতে পারি। লেকচারের শেষ অংশে দেখবো কিভাবে পৃথিবী তৈরি হল।

 

জৈব-আণবিক ঘড়ি (এই অংশটি অষ্টম এবং তদোর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীর জন্য)

ফসিল রের্কডের প্রমাণগুলি জৈব-আণবিক ঘড়ির তথ্যের সঙ্গে মেলানো যেতে পারে। জৈব-আণবিক ঘড়ি ডিএনএ’র (DNA) বিন্যাসকে ব্যবহার করে এবং কিভাবে একটি প্রজাতির জীব অন্য একটি প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্কিত সেটা খুঁজে বের করতে ব্যবহৃত হতে পারে। বর্তমান, আধুনিক জীব অনেকদিন আগে কোন একটি একক জীব থেকে উদ্ভব হয়েছিল কিনা এবং কিভাবে হয়েছিল সেটাও খুঁজে দেখা যায় এই ঘড়ি দিয়ে। অনেকদিন ধরে গড় মাত্রায় ডিএনএ’র কোন নির্দিষ্ট জায়গার ‘মিউটেশান’ (বিন্যাসে কোন ধরনের পরিবর্তন) হয়ে হয়ে জমা হওয়ার ফলে জীবের মধ্যে যেই বৈষম্য তৈরি হয় সেটার উপর নির্ভর করেই জৈব-আণবিক ঘড়ি তৈরি করা হয়। যদি দুইটি প্রজাতির ডিএনএ’র মধ্যে অধিক পরিমানে পার্থক্য বা বৈষম্য থাকে তবে ধারনা করা হয় তারা অনেক অনেক আগে একটি একক জীব থেকে পৃথক হয়েছিল এবং এখন দুইটি ভিন্নধরনের জীবে পরিনত হয়েছে। নিচের ছকটি দেখো। মানুষের সাথে অন্যান্য জীবদের ডিএনএ বিন্যাসে মিল শতকরা হারে দেখানো হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখবে শিম্পাঞ্জীর ডিএনএ (শিম্পাঞ্জী দেখতে অনেকখানিই মানুষের মত) মুরগীর ডিএনএর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের ডিএনএর কাছাকাছি।

ডিএনএ মিল

 

 

ভৌগলিক সময়ের মাপকাঠি (এই অংশটি অষ্টম এবং তদোর্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীর জন্য)

পৃথিবীর ইতিহাসকে জানার আরেকটি উপায় হল ভৌগলিক সময়ের মাপকাঠি বা স্কেল। এই মাপকাঠি পৃথিবীর ইতিহাসকে কয়েকটি বৃহৎ পর্যায়ে বিভক্ত করেছে, যেমন ইয়ন, এরা, পিরিয়ড ইত্যাদি। বিভাজনটি হয়েছে ভূগোলকের বড়সড় পরিবর্তনগুলির উপর নির্ভর করে, যেমন, ভৌগলিক পরিবর্তন, আবহাওয়া পরিবর্তন, জীবের বিবর্তন ইত্যাদি। এটা শুধু সময় দিয়ে ভাগ না করে বরং পৃথিবীর ইতিহাস এবং জীবের বিবর্তনকে গুরুত্ব অনুসারে ভাগ করেছে। যেমন, যেই সময়ে ডাইনোসর পৃথিবীতে বাস করতো সেই সময়টাকে আলাদে এরা হিসেবে ভাগ করা হয়েছে, নাম মেসোজয়িক এরা (Mesozoic Era)। নিচের ছক থেকে সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে মাপকাঠিটি দেখে নাও। ছকটি মুখস্থ করার কোন প্রয়োজন নাই, শুধু বোঝার জন্য দেখে নাও। বুঝতে পারছো যে আমরা সেনোজয়িক এরা (Cenozoic Era) তে বসবাস করি।

পৃথিবীর ভৌগলিক সময়ের বিভাজন এবং নাম

 

কিভাবে পৃথিবী তৈরি হল: আমরা সবাই নক্ষত্রকণা দিয়ে তৈরি

আমরা প্রাণের গল্পটা একেবারে প্রথম থেকেই শুরু করছি, যখন পৃথিবী এবং সৌরজগতের সবটুকু তৈরি হল। সৌরজগৎ একটি ঘুরতে থাকা নক্ষত্রকণার মেঘ থেকে তৈরি হয়েছে। তারপর কাছাকাছি একটি তারা বা নক্ষত্র বিস্ফোরিত হল এবং নক্ষত্রকণার মেঘ কে আন্দোলিত করলো এবং তারা ঘ‍্যূর্ণনের গতিকে বাড়িয়ে দিল। ফলে, মেঘটির প্রায় সবটুকু ভর একেবারে ঘূর্ণনের কেন্দ্রে গিয়ে জমা হল এবং সেটাই সূর্যের তৈরি করলো। আবার কিছু ছোট ছোট ভর সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল, তারা সব গ্রহগুলি তৈরি করলো। আমাদের পৃথিবীও এভাবে তৈরি হল। কিভাবে পৃথিবী তৈরি হল সেটা নিয়ে একটি দারুণ ভিডিও নিচে দেয়া হল। দেখে নাও ঝটপট। ইংরেজী বুঝতে কষ্ট হলে কাউকে জিজ্ঞেস করে নাও যেটা বুঝছোনা সেটার মানে।

 

 

প্রথমে, পৃথিবী ছিল গলিত (অনেক গরম ছিল বলে সবকিছুই তাপে তরল হয়ে গেছে। তুমি যদি লোহাকে অনেক তাপ দাও তবে লোহাও গলে তরল হয়ে যাবে) এবং সেখানে কোন জলবায়ু বা সমুদ্র ছিলনা। ধীরে ধীরে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে এবং এর বাইরের দিকে শক্ত আবরণ তৈরি হয়। আর জলবায়ুও তৈরি হল ধীরে ধীরে। প্রথম জলবায়ুতে ছিল এমোনিয়া, মিথেন, পানির বাষ্প এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। কিন্তু অক্সিজেন ছিল খুবই কম। যখন জলবায়ু ঘণ হতে থাকলো তখন মেঘ তৈরি হল এবং বৃষ্টি পড়লো ভূপৃষ্ঠে। বৃষ্টির পানি (এবং হয়তো উল্কাপাত মিলে) তৈরি করলো সমুদ্র। এই আদিম পৃথিবীর আবহাওয়া এবং সমুদ্র এখনকার বেঁচে থাকা জীবজন্তুর জন্য সম্ভবত বিষাক্ত ছিল, কিন্তু এটা প্রথম জীবের বা প্রাণের উদ্ভবের অনুকূল ছিল।

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.

Leave a Reply