«

»

অক্টো. 29

কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন – লেকচার ১ – জটিল সংখ্যা

কোয়ান্টাম কম্পিউটেশনের পেছনের বিজ্ঞানটিকে বলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স। আর এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যে গণিত তার ভিত্তি হল জটিল সংখ্যা। কাজেই আমরা আজকে জটিল সংখ্যার দরকারী ব্যাপারগুলো জেনে নিব।

পূর্বসূত্র: আগের লেকচার / ভিডিও দেখার পর যদি অনেকদিন পার হয়ে যায় তাহলে সেটি দেখে আপনি আরেকবার ঝালাই করে নিতে পারেন এই লিংক থেকে।

একটু পেছন থেকে শুরু করি। আগে জেনে নেই বাস্তব সংখ্যা কি? আমরা বাস্তব জীবনে যেসব সংখ্যা ব্যবহার করি সেগুলো সবই বাস্তব সংখ্যা। আপনার বয়স কত জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর হবে বাস্তব সংখ্যা। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর হবে বাস্তব সংখ্যা। শেয়ারবাজারে স্কয়ারফার্মার স্টকের দাম জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর হবে বাস্তব সংখ্যা। ক্রিকেট ম্যাচে রানরেট জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর হবে বাস্তব সংখ্যা।

এই বার আপনাদেরকে আমার জানাতে গণিতের সবচেয়ে বড় অবিচারের সাথে পরিচয় করাই। দরকারী ও উপকারী জিনিসের এমন খারাপ নাম দেয়ার আর কোন উদাহরণ আমার জানা নেই।

যা বলার নিচের ভিডিওতেই মোটামুটি সব বলে দিয়েছি।

তারপরেও যার ইচ্ছা নিচের আলোচনাটি পড়ে যেতে পারেন।

প্রথমে একটি সমীকরণ দিয়ে শুরু করা যাক।

[latex]x^2 + 1 = 0[/latex]

আমরা এখন এই সমীকরণটির সমাধান করব।

[latex] \Rightarrow x^2  = -1[/latex]

 

[latex] \Rightarrow x  = \pm \sqrt{ -1}[/latex]

 

এখন একটু চিন্তা করে দেখেন এরকম  সংখ্যা কি কখনও বাস্তব জীবনে পেয়েছেন? এই যে বর্গমূলের নিচে ঋণাত্মক চিহ্ন?

বর্গমূলের নীচে ধনাত্মক চিহ্ন অবশ্যই পেয়েছেন। ধরেন আপনার একটি জমি আছে যেটি দৈর্ঘ্যে আর প্রস্থে এক মাইল করে, অর্থাৎ বর্গাকৃতি।  এখন আপনি চাচ্ছেন এর মধ্যদিয়ে কোণাকুণি একটি পাকা রাস্তা করতে। আপনার তাহলে জানা দরকার কি পরিমাণ ইট, সুড়কি লাগবে। এর জন্য জানা দরকার রাস্তাটির দৈর্ঘ্য। কি করে জানবেন? পীথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করলে দেখা যাবে এই কর্ণ বরাবর রাস্তার দৈর্ঘ্য [latex]\sqrt{2}[/latex]   মাইল।

কিন্তু এরকম কখনও বর্গমূলের নিচে ঋণাত্মক সংখ্যা পাননি, তাই না? আসলে কয়েকশো বছর আগে প্রথম যখন গণিতবিদরা সমীকরণ সমাধান করতে গিয়ে এর মুখোমুখি হন তখন তারাও ভিমড়ি খেয়ে ছিলেন। খেয়ে সেটা হজম করতে পারেন নাই। তাদের কেউ কেউ বুঝতে পারছিলেন না এটি কি কাজে লাগে, এটি নিয়ে কি করা যায়। কেউ কেউ ধরেই নিয়েছিলেন এটির সাথে কোন অতিপ্রাকৃত শক্তির যোগাযোগ আছে।  আমাদের দেশে যখন আমরা কোনকিছুর ব্যাখ্যা করতে না পারলে জ্বীন-ভূত এসবের সাহায্য নেই তারাও তাই করলেন। তারা এর নাম দিয়ে দিলেন কাল্পনিক সংখ্যা বা ইমাজিনারী নাম্বার।

কিন্তু সে যুগ হয়েছে বাসী। আপনি আজকে একজন পুরকৌশলীকে জিজ্ঞেস করেন, একজন গণিতবিদকে জিজ্ঞেস করেন, একজন তড়িৎকৌশলীকে জিজ্ঞেস করেন সবাই বলবে ইমাজিনারী নাম্বার তাদের আত্মার আত্মীয়। প্রতিদিনই তারা এটি ব্যবহার করেন।

আরেকটি উদাহরণ দেই। আপনি প্রতিদিন কোন না কোন কাজে পানি ব্যবহার করেন।  পানির মতই হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নিয়ে গঠিত আরেকটি রাসায়নিক পদার্থ হল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। আপনি হয়তো এটি কোনদিনই ব্যবহার করেন নাই। কিন্তু বিউটি পার্লারে বা হাসপাতালে এটি নিয়মিত ব্যবহৃত হয়। কাজেই আপনি বাস্তব জীবনে ব্যবহার না করলেই সেটি কাল্পনিক হয়ে যাবে এই ব্যাপারটি ঠিক নয়। ইমাজিনারী নাম্বারের সাথে আমরা এই ঝামেলাই পাকিয়েছি। একটি ইমাজিনারী নাম্বার ঠিক ততটুকুই বাস্তব যতটুকু একটি বাস্তব সংখ্যা বাস্তব।

ক্রমান্বয়ে সমীকরণে আরো ভালভাবে প্রকাশ করার জন্য গণিতবিদরা কাল্পনিক সংখ্যার একটি একক নির্ধারণ করেছেন। এটি হল [latex]i[/latex]  । এর মান হল [latex]\sqrt{-1}[/latex] । তাহলে [latex]\sqrt{-2}[/latex] হবে [latex]i \sqrt{2}[/latex] , [latex]\sqrt{-\frac{3}{4}}[/latex] হবে [latex]i\sqrt{\frac{3}{4}}[/latex],   ইত্যাদি।

 

শিবের গীত শেষ। এইবার ধান ভানবো। এখন আমরা জটিল সংখ্যা কি সেটি দেখবং

জটিল সংখ্যা দেখতে এরকম – [latex] a + i b [/latex] । এর মধ্যে [latex] a [/latex]  এবং [latex] b [/latex]   হল বাস্তব সংখ্যা। কয়েকটি উদাহরণ দিলাম নিচে।

[latex] 1 + 2i [/latex]

 

[latex] \frac{1}{2} + 0.33 i [/latex]

 

[latex] \sqrt{\frac{1}{2}} + \frac{3}{4} i [/latex]

 

যেহেতু আমি উপরে বলেছি [latex] a [/latex] এবং [latex] b [/latex] বাস্তব সংখ্যা তাহলে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে আপনার বয়স  [latex] 32 [/latex] বছরকে [latex] 32 + 0 i [/latex] রুপে লেখা যায় কিনা। এর উত্তর হল অবশ্যই যায়।

 

যেকোন জটিল সংখ্যার যেহেতু দুইটি অংশ থাকে, যথাক্রমে বাস্তব ও কাল্পনিক, আমরা স্থানাংক ব্যবস্থার মত এটি মাধ্যমে এর চেহারা কল্পনা করে নিতে পারি। এটাকে বলে আর্গন্ড ডায়গ্রাম। আমি এখানে আমার প্রিয় অনলাইন গণিত টুল উলফ্র্যাম আলফা ব্যবহার করেছি। একটি সুনির্দিষ্ট বয়সী পাঠকদের ভাষায় এটি অস্থির একটি টুল। অন্য এক বয়সীদের ভাষায় এটি সেইরাম। যারা মতিকণ্ঠ পড়ে তাদের ভাষায় এটি অদ্ভুৎ।

 

ধরেন একটি জটিল সংখ্যা [latex] 1 + 2i [/latex] । এটি আর্গন্ড ডায়গ্রামে দেখতে কিরকম?

 

আর্গন্ড ডায়গ্রাম

আর্গন্ড ডায়গ্রাম

দেখতে খানিকটা লেখচিত্রের মত তাই না? হুমম ঠিক। শুধু তাই না। আপনি পরে দেখবেন মূলবিন্দু থেকে জটিল সংখ্যার বিন্দুটির অবস্থানের যে দূরত্ব অর্থাৎ মড‌্যুলাস সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দুই বিন্দুর সংযোগকারী রেখা বাস্তব অক্ষের সাথে কি কোণ তৈরি করে অর্থাৎ ফেজটিও গুরুত্বপূর্ণ।

আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। জটিল সংখ্যার চেহারা কেমন জানলাম। এখন আমরা জানব এটির গণিতটি কি। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করব কি করে। চলেন প্রথমে জটিল সংখ্যার একক [latex] i[/latex] নিয়ে একটু খেলাধূলা করি।

 

যোগ: [latex] i + i  = \sqrt{-1} + \sqrt{-1} = 2 \sqrt{-1} = 2i [/latex]

গুণ: [latex] i \times i = i^2 = \left( \sqrt{-1} \right)^2 = -1  [/latex]

 

একটু আগে করা গুণের উদাহরণ থেকে আমরা নিচের টুকুও দাবী করতে পারি, তাই না?

 

[latex]  i^3 = i \times i^2 = -i  [/latex]

এবার দেখি চিন্তা করে বের করেন বিয়োগ আর ভাগ কেমন হতে পারে। সাথে সাথে মাথায় না আসলে গুগল ব্যবহার করা জায়েজ।

 

দুইটি জটিল সংখ্যার গুণ থেকে আরেকটি জটিল সংখ্যা পাওয়া যায় এর একটি জেনারেল স্টেটমেন্ট দিলে মন্দ হয় না, কি বলেন? এতে আপনাদের ধারণা একটু পরিষ্কার হবে আর পাশাপাশি কিছু হিজিবিজি সমীকরণও পেইজে থাকল। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ সমীকরণই বেশ সহজ, ঠিক গণিত গণিত মুডটা আসছে না। চলেন শুরু করি।

 

[latex]  (a + i b) ( c + i d) = a c + i b c + i a d + i^2 b d = (ac – bd) + i (bc + ad)  [/latex]

 

যেহেতু এখানে [latex] a, b, c, d [/latex] এ সবই বাস্তব সংখ্যা কাজেই [latex] (ac – bd) , (bc + ad) [/latex] এই দুটিও বাস্তব সংখ্যা। কাজের গুণফল হিসেবে যেটি পেলাম সেটি জটিল সংখ্যা।

এইবার একটু গণিত গণিত ভাব আসছে না?

 

এইবার একটি বাড়ির কাজ দেই। নিচের গুণটি করতে পারবেন?

 

[latex]  (1 + i) ( 1 – i)   [/latex]

 

উত্তর জানতে চান মিলানোর জন্য? কিছু কথা থাকনা গুপন!

 

এইবার জটিল সংখ্যার অন্য একটি বিষয়ে যাই। এর নাম মড্যুলাস, সোজা বাংলায় মান।

 

ধরেন আপনার প্রিয় জটিল সংখ্যা  [latex] c = a + ib [/latex]। তাহলে এর মড্যুলাস হল :

 

[latex] |c| = |a + ib| = \sqrt{a^2 + b^2} [/latex]

 

তাহলে আরেকটা বাড়ির কাজ। [latex]  3 + i 4  [/latex] এই জটিল সংখ্যার মড্যুলাস কত?

খেয়াল করে দেখবেন আর্গন্ড ডায়গ্রামে মূলবিন্দু থেকে জটিল সংখ্যার দূরত্বই কিন্তু মড্যুলাস।

 

আরো একটি ধারণা গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল কনজুগেট।

[latex] a + i b [/latex] যদি একটি জটিল সংখ্যা হয় তাহলে এর কনজুগেট হল  [latex] a – i b [/latex]। কনজুগেট অপারেশনের একটি চিহ্ন আছে। একে ড্যাগার [latex] \left( \dagger \right) [/latex] বলে। অনেক জায়গায় স্টার বা তারা চিহ্ন (*) ব্যবহৃত হয়।

 

তাহলে দেখেন:

[latex] \left( (1 + 2i)^* \right)^*   = \left( 1 – 2i \right)^* = 1 + 2i [/latex]

মজা, তাই না?

 

মোটামুটি আজকে এটুকুই। আজকের আমরা বুঝলাম জটিল সংখ্যা নামেই কেবল জটিল কিন্তু কাজে কর্মে একদম সহজ সরল। আরো জানতে চাইলে বই হিসেবে আপনারা এইচএসসির যেকোন গণিতের টেক্সটবই ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া খান একাডেমীর লেকচারগুলোতো আছেই।

এখন আমরা একটু জেনে নেই কেন জটিল সংখ্যা আমাদের জানা দরকার। এর সবচেয়ে ভাল উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানী ফাইনম্যান তার লেকচার অফ ফিজিক্স বইয়ের ২২ নম্বর অধ্যায়ে। সহজ কথায় বলতে গেলে জটিল সংখ্যা আসলে দুইটি তথ্য বহন করে। কোন রাশির মান ও তার ফেইজ বা ওরিয়েন্টেশন। এই কারণে এটি বাস্তব সংখ্যার চেয়ে বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সে ঠিক এই জিনিসটিই দরকার। এটি শুধু কোয়ান্টাম মেকানিক্সে না বিজ্ঞানের যেকোন শাখায় যেখানে কোন বাস্তব ঘটনাকে কিছু সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয় সেখানেই প্রায় কোন না কোন ভাবে এটি এসে হাজির হয়।

কাজেই জটিল সংখ্যা খুব দরকারী আর ভালো জিনিস। আমি যখন প্রথম আন্ডারগ্র্যাডের জন্য শাবিপ্রবিতে যাই মেসে উঠে নতুন যেসব ভালো অর্থে বিশেষণ শিখি তার মধ্যে একটি ছিল ‘জটিল’। প্রথম প্রথম আমার মাথায় ঢুকত না কোন কিছুকে ‘জটিল’ বলা কি করে প্রশংসা হতে পারে। এখন আমি বুঝি খুব সম্ভবত: গণিতের কোন ছাত্র এটি চালু করেছিল।

যাই হোক বাড়ির কাজগুলো করে রাখবেন আর তারপর মাথা ঠান্ডা করার জন্য নিচের গান।

 

Comments

comments

About the author

ওমর শেহাব

1 ping

  1. কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন – লেকচার ২ক – কমপ্লেক্স ভেক্টর স্পেস

    […] আগের লেকচারে আমরা জেনেছিলাম জটিল সংখ্যা হল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের প্রাণ। কথাটা ভুল না হলেও একটি খন্ডিত সত্য। জটিল সংখ্যাকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেটি যদি আমরা না জানি তাহলে ব্যাপারটি ঠিক পরিষ্কারভাবে বুঝা যাবে না। এই জন্যই আমাদের কমপ্লেক্স ভেক্টর স্পেস জানা দরকার। কমপ্লেক্স ভেক্টর স্পেস মানে হল ভেক্টর দ্বারা গঠিত এমন একটি স্পেস যেখানে ভেক্টরের উপাদানগুলি হল জটিল সংখ্যা। […]

Leave a Reply