«

»

এপ্রিল 04

পরিসংখ্যান পরিচিতি – লেকচার ৯ – গণনার পদ্ধতিসমূহ – Counting Techniques

[নিবন্ধনের লিংক] [কোর্সের মূল পাতা]

গণনার পদ্ধতিসমূহ (Counting Techniques)

এনায়েতুর রহীম

 

গত পর্বে আমরা সম্ভবনার খুঁটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। বলেছিলাম স্যাম্পল স্পেইস (sample space)  বা নমুনা ক্ষেত্র হচ্ছে সম্ভাবনার খুঁটি। কারণ হলো—সম্ভাবনা বের করতে গেলে  স্যাম্পল স্পেইস এর মধ্যে কয়টি উপাদান আছে সেটি জানা দরকার হয়। আজ আমরা স্যাম্পল স্পেইস এর উপাদানগুলো গণনা করার পদ্ধতিগুলো শিখবো।

পরিসংখ্যান শিখতে এসে গণিতের যে অংশটুকু সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছিল সেটি হল বিন্যাস (Permutation) ও সমাবেশ (Combination)। ছাত্রাবস্থায় অনেক কষ্টকর সময় কেটেছে এই জিনিস নিয়ে। এর মূল কারণ ছিল বই-পত্রে এ সম্পর্কে ভালো উদাহরণের অভাব। কখন বিন্যাসের ফর্মুলা ব্যবহার করতে হবে  আর কখন সমাবেশ এর ফর্মুলা ব্যবহার করতে হবে সেখানেই ছিল যত সমস্যা। কিন্তু উদাহরণ দিয়ে দেখলে বোঝা যায় ব্যাপারটা তেমন কঠিন নয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং অর্ডার

আসুন আমরা ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে একটু কাজ করি। আমরা জানতে চাইবো আমাদের ক্রিকেট টিমের ১১ জন খেলোয়াড়কে কত রকম ভাবে ব্যাট করতে পাঠানো যাবে। আমরা ধরে নেব যে, কোন একটি ইনিংসে দলের সবগুলো খেলোয়াড়কেই ব্যাট করতে পাঠাতে হবে। প্রথমেই এগার জন খেলোয়াড়ের একটা তালিকা করি। এই তালিকাটি ২০১৩ এর মার্চ মাসে শ্রীলংকা সফরের সময় করা হয়েছিল।

তালিকাব্যাটিং ক্রমব্যাটিং অর্ডার -১ব্যাটিং অর্ডার -২ব্যাটিং অর্ডার -৩ব্যাটিং অর্ডার -৪
আশরাফুলআশরাফুলসামসুর রহমানশাহাদাতআশরাফুল
সামসুর রহমানসামসুর রহমানআশরাফুলআশরাফুলনাসির
জহরুলমুশফিকুরমুশফিকুরমুশফিকুরমুশফিকুর
মুশফিকুরজহরুলজহরুলজহরুলজহরুল
নাসিরনাসিরনাসিরনাসিরশাহাদাত
মাহমুদুল্লাহমাহমুদুল্লাহমাহমুদুল্লাহমাহমুদুল্লাহমাহমুদুল্লাহ
মমিনুলমমিনুলমমিনুলমমিনুলমমিনুল
সোহাগ গাজীসোহাগ গাজীসোহাগ গাজীসোহাগ গাজীসোহাগ গাজী
শাহাদাতশাহাদাতশাহাদাতসামসুর রহমানসামসুর রহমান
আব্দুর রাজ্জাক১০আব্দুর রাজ্জাকআব্দুর রাজ্জাকআব্দুর রাজ্জাকআব্দুর রাজ্জাক
রুবেল হোসেন১১রুবেল হোসেনরুবেল হোসেনরুবেল হোসেনরুবেল হোসেন

 

উপরে চারটি সম্ভাব্য ব্যাটিং অর্ডার দেয়া হল। প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম কতটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটিং অর্ডার তৈরী করা সম্ভব? এখানে একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ—খেলোয়াড় কিন্তু এগার জনই, শুধু যে ক্রমে (বা অর্ডারে) তারা নামবে (কার পরে কে) সেটি ভিন্ন। অর্থাৎ অর্ডার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্ডারের ব্যাপারটা মনে রাখতে হবে। এটুকুই কাজ। বাকিটা স্বাভাবিকভাবেই সমাধান করা যাবে।

উপরের প্রশ্নটির উত্তর জানতে গেলে আমাদের একটু ছবি আঁকতে হবে। সেই ছবি থেকে আমরা উত্তরটি বের করবো। নিচের চিত্রটি দেখুন।

 

বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার

চিত্র: বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার

 

আমরা দেখতে পেলাম প্রথম পজিশনটি ১১ জন খেলোয়াড়ের যেকোন এক জন দিয়ে পুর্ণ করা যাবে। অর্থাৎ শুধু প্রথম পজিশনটিকে পরিবর্তিত করে এবং বাকী পজিশনগুলোতে কোন পরিবর্তন না করেই মোট এগারটি আলাদা আলাদা ব্যাটিং অর্ডার তৈরী করা যাবে।

প্রথম পজিশনটি নির্ধারিত হয়ে গেলে ২য় পজিশনের জন্য বাকী থাকবে ১০ জন খেলোয়াড়।  ১ম পজিশনের মতই ২য় ব্যাটিং পজিশনের জন্য ১০ জন খেলোয়াড়ের যেকোন একজনকে নেয়া যাবে।

এভাবে অপশন কমতে কমতে শেষ পজিশনের জন্য মাত্র একজন খেলোয়াড় অবশিষ্ট থাকবে।

তাহলে মোট কতগুলি ব্যাটিং অর্ডার তৈরী করা সম্ভব? এর  উত্তরের জন্য আমরা একটা সাধারণ গুননের নিয়ম শিখবো।

গুননের নিয়ম (Multiplication Rule)

কোন একটি কাজ (পরীক্ষণ) যদি যদি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা যায় তাহলে আমরা গুনেনর নিয়ম প্রয়োগ করতে পারবো। ধরি একটি পরীক্ষণ তিনটি ধাপে শেষ করা যায়। যদি প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করার জন্য ক সংখ্যক উপায় থাকে, ২য় ধাপটি সম্পন্ন করার জন্য খ সংখ্যক উপায় থাকে, এবং তৃতীয় ধাপটি সম্পন্ন করার জন্য গ সংখ্যক উপায় থাকে, তাহলে এই পরীক্ষণটি মোট ক গুনন খ গুনন গ উপায়ে সম্পন্ন করা যাবে। এটিই গুননের নিয়ম।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সম্ভাব্য মোট ব্যাটিং অর্ডারের সংখ্যা নির্ধারণের কাজটিকে আমরা একটি পরীক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। এক্ষেত্রে পরীক্ষণটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা যাচ্ছে – ১ম ধাপে একজন ব্যাটসম্যানকে বাছাই করতে হবে যিনি ফেইস করবে, ২য় ধাপে একজন ব্যাটসম্যানকে বাছাই করতে হবে যিনি ওপেনিং পার্টনার হবেন। এভাবে সবার শেষে এগারতম ব্যাটসম্যানের পজিশন নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ এই পরীক্ষণটি মোট ১১টি ধাপে শেষ করা যাবে।

তাহলে গুননের নিয়মে মোট ব্যাটিং অর্ডারের সংখ্যা = ১১ x ১০ x ৯ x  ৮ x ৭ x ৬ x ৫ x ৪ x ৩ x ২ x ১ = ৩,৯৯,১৬,৮০০

ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্যি; প্রায় চার কোটি উপায়ে ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ করা যাবে। হোলি কাউ!

গুননের নিয়মের আরো কিছু উদাহরণ

পাসওয়ার্ড (Password) আমাদের কাছে এখন নতুন কোন বিষয় নয়। কম্পিউটার থেকে শুরু করে জিমেইল/ইয়াহু হয়ে মোবাইল ফোনেও এখন পাসওয়ার্ড দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। ধরুন আপনি কম্পিউটারে কেবলমাত্র সংখ্যা ব্যবহার করে ৩ ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড সেট করলেন। তারপর সেটা ভুলে গেলেন। এখন কিভাবে লগিন করবেন? ধরুন আপনি চাইছেন বারবার ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাব্য পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করে লগিন করতে। এভাবে পাসওয়ার্ড ভাঙার প্রক্রিয়াকে বলে ব্রুট ফোর্স এ্যাটাক (Brute-force attack).  এভাবে কতবার চেষ্টা করলে পাসওয়ার্ডটি ভাঙা সম্ভব হবে?

এই উত্তর জানার জন্য আমাদের জানতে হবে সংখ্যা দিয়ে তৈরী ৩ ডিজিটের কতগুলো পাসওয়ার্ড সম্ভব। গুননের নিয়ম ব্যবহার করে আমরা এর উত্তর বের করতে পারি। নিচের দুটি পরিস্থিতি  চিন্তা করা যাক।

পাসওয়ার্ডে যদি কোন সংখ্যা একাধিকবার ব্যবহার না করা হয়

কোন সংখ্যা যদি একাধিকবার ব্যবহার না করা হয়, তাহলে ৩ অংক দিয়ে মোট (১০)(৯)(৮) = ৭২০ টি পাসওয়ার্ড তৈরী করা সম্ভব। কিভাবে বের করলাম? বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার যেভাবে বের করেছিলাম, একদম সেভাবে। এখানে পাসওয়ার্ডের প্রথম সংখ্যাটি ০ থেকে ৯ এর যেকোনটি হতে পারে। অর্থাৎ প্রথম সংখ্যাটি বেছে নেয়ার ১০ টি উপায় রয়েছে। প্রথমটি বেছে নেয়ার পরে বাকী ৯টি সংখ্যাটি থেকে যেকোন একটিকে ৯ ভাবে বেছে নেয়ে যায়। এর পর তৃতীয় সংখ্যাটি অবশিষ্ট ৮টি সংখ্যার যেকোন একটি হতে পারে। মোট পাসওয়ার্ডের সংখ্যা বের করার এই পরীক্ষণটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা যাবে। প্রথম থাপে ১০ ভাবে, ২য় ধাপে ৯ ভাবে এবং ৩য় ধাপে ৮ ভাবে।  তাহলে গুননের নিয়মে মোট ৭২০ টি পাসওয়ার্ড হতে পারে, এবং ব্রুট-ফোর্স দিয়ে সর্বোচ্চ ৭২০ বার চেষ্টা করেই পাসওয়ার্ড ভাঙা সম্ভব।

পাসওয়ার্ডে কোন সংখ্যা একাধিকবার ব্যবহার করা হলে

যদি একই সংখ্যা একাধিকবার ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলেও গুননের নিয়ম ব্যবহার করে আমরা সম্ভাব্য পাসওয়ার্ডের সংখ্যা বের করতে পারি। এক্ষেত্রে প্রথম সংখ্যাটি ০ থেকে ৯ এর যেকোনটি হতে পারে। দ্বিতীয় সংখ্যাটিও ০ থেকে ৯ এর যেকোনটি হতে পারে কারণ একই সংখ্যার পুনরাবৃত্তি হতে বাধা নেই। এভাবে তৃতীয় সংখ্যাটিও ০ থেকে ৯ এর যেকোনটি হতে পারে। অর্থাৎ প্রতিটি অবস্থানের জন্য আমাদের ১০টি করে অপশন রয়েছে। তাহলে গুননের নিয়মে মোট (১০)(১০)(১০)= ১০০০টি সম্ভাব্য পাওয়ার্ড পাওয়া যাবে।

উপরের দুটি উদাহরণ থেকে আমরা একটা বিষয় হয়তো শিখতে পেরেছি যে গুননের নিয়ম ব্যবহার করে কোন পরীক্ষণের সম্ভাব্য সকল ফলাফল বের করা সম্ভব। গুননের নিয়ম ব্যবহারের উদাহরণ থেকে আমরা আরেকটা বিষয় হয়তো লক্ষ্য করে থাকবো যে পরীক্ষণটি সমাধা করার ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে আসে। অর্থাৎ কোন্ ধাপের পরে কোন্ ধাপ আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডারের উদাহরণটা যদি আমরা মনে রাখি তাহলে সহজেই অর্ডারের এই বিষয়টি মাথায় রাখতে পারবো। ব্যাটিং অর্ডারে যেমন ধাপ বা অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ তেমনি যেসব পরীক্ষণে অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ সেসব ক্ষেত্রে আমরা  গুননের নিয়ম প্রয়োগ করতে পারবো।

এবারে ভিন্ন ধরনের আরো দুটি উদাহরণ চিন্তা করা যাক।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক নির্বাচন

আমরা জানতে চাইবো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ১১ জন খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে কত ভাবে দুই জন খেলোয়াড়কে বেছে নেয়া যাবে যাঁরা পরবর্তীতে অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক হবেন। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু ক্যালকুলেশন করতে হবে, আর তাই কাজটি সহজে করার জন্য আমরা ধরে নেই ১১ জন নয়, বরং চার জন খেলোয়াড়ের একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যেকোন দুই জনকে আমরা বেছে নেব। আমরা জানতে চাইবো এই চার জন খেলোয়াড় থেকে কত রকম ভাবে দুই জন খেলোয়াড়কে বেছে নেয়া যাবে।  সংক্ষিপ্ত তালিকাটি এরকম–

 

সংক্ষিপ্ত  তালিকা (৪ জন)
আশরাফুল, মুশফিকুর, মাহমুদুল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক

 

লক্ষ্যণীয় হচ্ছে ব্যাটিং অর্ডারের মতো বাছাই ক্রম (কার পরে কাকে বাছাই করা হচ্ছে) এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুজনকে বেছে নেয়া। কার পরে কাকে নেয়া হবে সেটা কোন ব্যাপার নয়। বাছাইক্রম গুরুত্বপূর্ণ হতো যদি আমরা এভাবে বাছাই করতাম যে প্রথম জন হবেন অধিনায়ক আর দ্বিতীয় জন হবেন সহ-অধিনায়ক। সে উদাহরণে আমরা পরে আসছি, এখন শুধু দুজনকে বাছাই করবো—সেটা কিভাবে এবং কত ভাবে করা যায় সেটা শিখবো।

উত্তরটি বের করার জন্য আমরা এই চার জন থেকে দুই জন দুই জন করে নিয়ে একটা তালিকা তৈরী করবো। নামগুলো বারবার যাতে না লিখতে হয় সেজন্য এই চারজন খেলোয়াড়কে আমরা নিচের মতো করে সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করবো।

১ = আশরাফুল, ২ = মুশফিকুর, ৩ = মাহমুদুল্লাহ, ৪ = আব্দুর রাজ্জাক

এই চিহ্ন অনুসারে (১,২) মানে আমরা বুঝবো (আশরাফুল, মুশফিকুর).  তাহলে আমরা তালিকাটি করে ফেলি।

(১, ২), (১, ৩), (১, ৪)
(২, ৩), (২, ৪)
(৩, ৪)

এখানে আমরা ইচ্ছে করলে (১, ২) এর মতো (২, ১)ও লিখতে পারতাম কিন্তু  সেক্ষেত্রে বাছাইকৃত খেলোয়াড় দুজন একই হতেন। (আশরাফুল, মুশফিকুর) যা (মুশফিকুর, আশরাফুল) তা-ই। আমরা দেখলাম (১, ২) এবং (২, ১) একই বাছাই। অর্থাৎ কার পরে কাকে বাছাই করা হচ্ছে সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। অর্থাৎ বাছাইয়ের অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই অর্ডারের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।

উপরে আমরা দেখলাম যে, চারজন খেলোয়াড় থেকে দুই জন করে মোট ছয়টি আলাদা আলাদা বাছাই হতে পারে। সেগুলো হল (১, ২), (১, ৩), (১, ৪), (২, ৩), (২, ৪), (৩, ৪)

এবারে আমরা বিন্যাস ও সমাবেশ কী এবং এগুলো কিভাবে বের করা হয় তার ফর্মুলা শিখবো।

বিন্যাস (Permutation) ও সমাবেশ (Combination)

এতক্ষণে আমরা আশা করি অর্ডারের ব্যাপারটা মোটামুটি বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে কখন অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ আর কখন নয়। এটুকু বুঝতে পারলে আমরা বিন্যাস (Permutation) ও সমাবেশ (Combination) এর ফর্মুলা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারবো।

বিন্যাস

বিন্যাস হলো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক (n) কতগুলো জিনিস থেকে বাছাইক্রম বিবেচনায় রেখে কিছু সংখ্যক (r) জিনিস বাছাই করার প্রক্রিয়া।

বিন্যাসের ক্ষেত্রে বাছাইক্রম বা অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ: ব্যাটিং অর্ডার বাছাই করা। আরেকটি উদাহরণ হলো সম্ভাব্য সকল পাসওয়ার্ডের তালিকা করা। ধরা যাক আপনার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ডটি DhaKa4. এখানে বর্ণ ও সংখ্যার মধ্যে অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ কারণ DhaKa4 এবং 4DhaKa দুটি ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড। Password এর উদাহরণের মতো যেসব ক্ষেত্রে অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ সেসব ক্ষেত্রে আমরা Permutation ব্যবহার করবো। আর অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ না হলে আমরা সমাবেশ (Combination) ব্যবহার করবো।

সমাবেশ

সমাবেশ হলো বিন্যাসের মতই বাছাই করার প্রক্রিয়া যেখানে বাছাইক্রম বিবেচনায় নেয়া হয় না।

যখন বাছাইক্রম বা অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেমন চার জন খেলোয়াড় থেকে দুই জনকে যত ভাবে বাছাই করা যায় তা আমরা সমাবেশ-এর নিয়ম ব্যবহার করে বের করতে পারবো। (মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকুর) আর (মুশফিকুর, মাহমুদুল্লাহ) এই দুই বাছাইয়ের মধ্যে তফাত নেই। অর্থাৎ অর্ডার কোন প্রভাব ফেলছে না। এরকম ক্ষেত্রে আমরা সমাবেশ ব্যবহার করবো।

নিচে বিন্যাস ও সমাবেশের ফর্মুলা দেয়া হলো। এই ফর্মুলায় ফ্যাক্টরিয়াল চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্যাক্টরিয়ালকে আশ্চর্যবোধক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। চার-ফ্যাক্টরিয়াল-কে লেখা হয় ৪! আর এটি সমান ৪x৩x২x১ = ২৪

 

বিন্যাস ও সমাবেশ এর ফর্মুলা

চিত্র: বিন্যাস ও সমাবেশ এর ফর্মুলা

চার জন খেলোয়াড় থেকে দুই জনকে বাছাই করার জন্য যেহেতু বাছাই ক্রম গুরুত্বপূর্ণ নয় সেহেতু আমরা সমাবেশ-এর ফর্মুলা ব্যবহার করবো। উপরের চিত্রে কমবিনেশনের ফর্মুলা থেকে দেখতে ৪ জন খেলোয়াড় থেকে ২জন খেলোয়াড়কে আমরা মোট ৬ ভাবে বাছাই করতে পারবো।

কখন বিন্যাস আর কখন সমাবেশ: মনে রাখার সহজ উপায়

উদাহরণমন্তব্যযে নিয়ম ব্যবহার করতে হবে
PasswordPassword  এবং Permutation শুরু হয় P দিয়ে,অর্ডার গুরুত্বপূর্ণবিন্যাস (Permutation) অথবা গুননের নিয়ম
ব্যাটিং অর্ডারকার পরে কে নামবে সেটা গুরুত্বপূর্ণবিন্যাস (Permutation) অথবা গুননের নিয়ম
৪ জন থেকে ২ জন বাছাইকার পরে কে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেকোন দুজন হলেই হবে, অর্ডার গুরুত্বপূর্ণ নয়সমাবেশ (Combination)

 

শেষ কথা

বিন্যাস ও সমাবেশ অনেকের কাছেই কঠিন। আশা করি উপরের উদাহরণগুলো থেকে এখন আপনি নিজেই এগুলোর যথাযথ প্রয়োগ করতে পারবেন। আমরা দেখেছি যে বিন্যাস (Permutation) ব্যবহার করা হয় যখন অর্ডার (বাছাইক্রম) গুরুত্বপূর্ণ, আর সমাবেশ (Combination) ব্যবহার করা হয় যখন বাছাই ক্রম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাছাইক্রম গুরুত্বপূর্ণ হলে গুননের নিয়মও ব্যবহার করা যায়। গুননের নিয়ম আর বিন্যাসের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে যা আমরা আলোচনা করবো না। কিন্তু যারা আগ্রহী তারা হয়তো একটু চিন্তা করলেই বের করে ফেলতে পারবেন।

আজ এপর্যন্তই। পরবর্তী লেকচারে আমরা সম্ভাবনার (Probability) সাথে পরিচিত হবো এবং গুননের নিয়ম, বিন্যাস, এবং সমাবেশ ব্যবহার করে সম্ভাবনা বের করা শিখবো।

কুইজ

ধরা যাক আশরাফুল, মুশফিকুর, মাহমুদুল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক এই চারজন খেলোয়াড়ের মধ্যে থেকে দুই জনকে বাছাই করতে হবে এমন ভাবে যেন প্রথম জন হবেন অধিনায়ক আর দ্বিতীয় জন হবেন সহ-অধিনায়ক। বলুন দেখি কত ভাবে দুইজন খেলোয়াড়কে বাছাই করা যাবে? (সূত্র: এখানে বাছাইয়ের অর্ডার কি গুরুত্বপূর্ণ?)

উত্তরটি মন্তব্যের মাধ্যমে দিন।

আগের লেকচার-এর লিংক

ভূমিকা

লেকচার ১ – উপাত্ত সংগ্রহ

লেকচার ২ – গবেষণা পদ্ধতি ও চলক সম্পর্কে ধারণা

লেকচার ৩ – ড্যাটা সামারি বা উপাত্ত সারাংশ (কোয়ালিটেটিভ ভ্যারিয়েবল)

লেকচার ৪ – হিস্টোগ্রাম ও ড্যাটার শেইপ

লেকচার ৫ – কেন্দ্রীয় প্রবণতা ও তার পরিমাপসমূহ

লেকচার ৬ – ভেদ ও এর পরিমাপসমূহ 

লেকচার ৭ – তুলনামূলক অবস্থান ও z-score

লেকচার ৮ – সম্ভাবনার খুঁটি 

কোর্সের সূচনা পাতা

Comments

comments

About the author

এনায়েতুর রহীম

পরিসংখ্যান নিয়ে আছি প্রায় দুই দশক -- এখনো শিখছি--পড়ে এবং পড়ানোর মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পরিসংখ্যানে ব্যাচেলরস, মাস্টার্স। গবেষণা মূলত গাণিতিক পরিসংখ্যান নিয়ে। বিশেষভাবে কাজ করি রিগ্রেশন মডেলে Shrinkage and Absolute Penalty Estimation নিয়ে। আরো কাজ করি পরিসংখ্যান বিষয়ক সফটওয়্যার, মন্টি কারলো, রিস্যাম্পলিং, জনস্বাস্থ্য ও এপিডেমিওলজি, এবং পরিবেশ বিষয়ক পরিসংখ্যানে। কর্মজীবন শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নর্দার্ন কলোরাডো তে ফলিত পরিসংখ্যানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ব্যক্তিগত সাইট

3 pings

  1. পরিসংখ্যান পরিচিতি – লেকচার ১০ – সম্ভাবনা – Probability

    […] লেকচার ৯ এ আমরা গুননের নিয়ম শিখেছিলাম। সেটি ব্যবহার করে আমরা বলতে পারি এই পরীক্ষণে ২ গুনন ২ = ৪টি সম্ভাব্য ফল আসবে। নিচের চিত্রে পরীক্ষণের ফলগুলোকে আমরা দেখার চেষ্টা করি। এই পরীক্ষণটি দুটি ধানে সম্পন্ন করা যাবে– প্রথম ধাপে একটি কয়েন টস করা হবে যার ফলাফল হতে পারে হেড অথবা টেইল। প্রথম ধাপে হেড আসলে দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় কয়েনটি টস করা হবে এবং তার ফলাফল হেড অথবা টেইল হতে পারে। এভাবে সম্ভাব্য ফলগুলোকে ছবিতে দেখানো হয়েছে। […]

  2. পরিসংখ্যান পরিচিতি – লেকচার ১১ – কতিপয় জটিল ঘটনার সম্ভাবনা- Probability of Complex Events

    […] লেকচার ৯ – গণনার পদ্ধতিসমূহ […]

  3. পরিসংখ্যান পরিচিতি – লেকচার ১৭ – নিরূপণ (Estimation)

    […] লেকচার ৯ – গণনার পদ্ধতিসমূহ […]

Leave a Reply