«

»

জানু. 31

দাবা খেলা পরিচিতি – লেকচার ১২,৩- পাজল সমাধান করা শিখুন

Combination:

“Combinations have always been the most intriguing aspect of Chess. The masters look for them, the public applauds them, the critics praise them. It is because combinations are possible that Chess is more than a lifeless mathematical exercise. They are the poetry of the game; they are to Chess what melody is to music. They represent the triumph of mind over matter” (Reuben Fine)

ঘুটি জিতে নেওয়ার একাধিক কৌশল (লেকচার ১২) একসাথে ব্যবহার করে পরপর বেশ কয়েকটা শক্তিশালী  চাল (forcing moves) এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ঘুটি জিতে নিয়ে ভালো অবস্থায় পৌছে যাওয়া কে দাবার ভাষায় কম্বিনেশন বলে। একটা কম্বিনেশন খুব সহজ হলে তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে মাত্র দুই চাল দরকার। কঠিন হলে ১৫-২০ বা তার বেশি সঠিক চাল দেওয়া দরকার। কম্বিনেশন কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা আমরা কিছু পাজল সমাধান করার মাধ্যমে শিখবো। নিচে একটা খুব বিখ্যাত কম্বিনেশন এর উদাহরণ দিলাম। নীচের ছবিটি দেখুন। এই অবস্থায় কালোর চাল। এই অবস্থায় কালো একটা মারাত্মক চাল দিয়েছিলো, যার জন্য এই খেলাটা বিশ্ববিখ্যাত।

lecture12.2.7

কালোর চাল। কী চালবেন?

কালোর চাল এর পর বোর্ডের অবস্থান দেখুন। কালো তার মন্ত্রীকে খেতে দিয়েছে। কালো কি পাগল হয়ে গ্যাছে?

lecture12.2.8

1…Qg3!!!
কালো তার মন্ত্রীকে তিন রকম ভাবে খেতে দিয়েছে। সাদা যেভাবেই খুশি খেতে পারে, কিন্তু হার আটকাতে পারবে না। না খেলেও হারবে।

না, কালো পাগল হয়নি। প্রথমে দেখি সাদা যদি কালোর মন্ত্রী না খেয়ে কোন ফালতু চাল দেয় তাহলে কি হবে। এইচ ২ ঘরে মন্ত্রী দিয়ে কিস্তি ও কিস্তিমাত। সুতরাং সাদা কালোর মন্ত্রী খেতে বাধ্য।

এবার আমরা দেখবো সাদা যদি কালোর মন্ত্রী খায় তাহলে কি হবে। প্রথমে

2.hxg3 Ne2 # কালোর রাজা কিস্তিমাত। আনালিসিস বোর্ড নিচে।

lecture12.2.9

analysis board1

অন্যভাবে মন্ত্রী খেলে কি হবে দেখা যাক।

2.fxg3 Ne2+ 3.Kh1 Rxf1#. আবার কিস্তিমাত। আনালিসিস বোর্ড নিচে।

lecture12.2.10

analysis board2

সুতরাং দুটো বোড়ের কোনোটা দিয়েই মন্ত্রী খাওয়া চলবে না।

শেষ সম্বাবনা, মন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রী খাওয়া হলে কী হবে দেখা যাক।

2.Qxg3 Ne2+ 3.Kh1 Nxg3+ 4.Kg1 (4.fxg3 Rxf1#) Ne2+ 5.Kh1 Rx3 6.Rxc3 Nxc3

আনালিসিস বোর্ড নিচে

lecture12.2.12

analysis board3

এবং সমস্ত খাওয়াখাওয়ির শেষে কালোর একটা বাড়তি ঘোড়া আছে। সুতরাং কালো এরপর খেলাটা সহজেই জিতে যাবে। আসল খেলায় কালোর মন্ত্রী চাল 1…Qg3  এর পর সাদা খেলার বাকি অংশ টা মানসচক্ষে দেখে হার স্বীকার করেছিলেন।

এই কম্বিনেশনের সমস্ত চাল গণনা করা খুব একটা কঠিন না, তবে মন্ত্রীকে ওরকম ঘরে চাল বিবেচনা করার জন্য ভালো কল্পনাশক্তি দরকার।

কথিত আছে, এই কম্বিনেশনের মন্ত্রীর মোক্ষম চালটি খেলা হবার পর পর দর্শকরা খেলার বোর্ডে স্বর্ণমূদ্রা ছুড়েছিলেন। এইসব গল্পকথার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা শক্ত, তবে কম্বিনেশনটি যে খুব সুন্দর তাতে কোন সন্দেহ নেই।

……………………

কোন কম্বিনেশন খুব কঠিন হলে তা সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য ১০-২০ টা চাল সঠিকভাবে গণনা করা দরকার। খুব বড় গ্রান্ডমাস্টার বা বিশাল শক্তিশালী কম্পুটার ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে এরকম কম্বিনেশন গণনা করা শক্ত। তবে বেশিরভাগ কম্বিনেশন ৩-৫ চালের হয়, এবং একটু অভ্যাস করলে তা গণনা করা খুব কঠিন নয়। কম্বিনেশন কি ভাবে গণনা করবেন তা নিচে ১০ ধাপে লিখে দিলাম।

কোন দাবার puzzle এর সমাধান করার একটা সাধারণ পদ্ধতি নিচে দিলাম। একটা পজিশন পাজল হিসাবে দেওয়া হয়েছে মানে ওই পজিশনের একটা সমাধান আছে। সমাধান টা বোঝার জন্য আমাদের পর পর কয়েকটা সঠিক চাল খুঁজে বার করতে হবে।

  1. সবার আগে দেখুন দুই পক্ষের কতটা ঘুটি আছে।
  2. তারপর দেখুন দুই পক্ষের কি কি শক্তিশালী/দুর্বল জায়গা আছে। দুর্বল জায়গা বলতে প্রধাণত বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা রাজা, প্রায় বন্দি হয়ে যাওয়া মন্ত্রী বা অরক্ষিত/অপর্যাপ্ত রক্ষিত ঘুটি্র দিকে নজর দিন। বেশিরভাগ পজিশনে রাজার নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় বিষয়।
  3. প্রতিপক্ষের কোন দুর্বলতা না থাকলে কম্বিনেশন কাজ করে না (Stenitz rule) – তাই প্রতিপক্ষের কোন রকম দুর্বলতা থাকা অবশ্যই দরকার। দুর্বল জায়গা খুজে বার করা আপনার কাজ। দুর্বল জায়গায় আক্রমণের কথা ভাবুন।
  4. প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে না পেলে একের পর এক নিয়মসম্মত চাল কে সম্ভাব্য চাল (candidate move) ধরে  সমস্ত সম্ভাবনা বিচার করলে হয়তো সমস্যার সমাধান সম্ভব, কিন্তু অফুরন্ত সম্ভাবনা একের পর এক বিচার করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এইভাবে সমস্ত চাল গণনা করে (brute force method) কম্পুটার সফল হয়, কিন্তু মানুষ কম্পুটার নয়, তাই এই পদ্ধতি মানুষের জন্য ভালো নয়।
  5. একবার প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে পেলে সেই দুর্বলতায় আঘাত করার জন্য সম্ভাব্য চালগুলোর কথা ভাবুন। এই রকম সম্ভাব্য চাল কে বলা হয় candidate move. এরকম পজিশনে সাধারণত মাত্র কয়েকটা ক্যান্ডিডেট মুভ থাকে।
  6. এই সমস্ত ক্যন্ডিডেট মুভ এর মধ্যে কোন চাল গুলো সবচেয়ে forcing তা বোঝার চেষ্টা করুন। কারন এই ধরনের চাল প্রতিপক্ষের চালের সম্ভাবনাকে মাত্র কয়েকটা চালের মধ্যে আটকে রাখে, তাই পরের চালগুলো গণনা করা সহজ। অনেক সময় এরকম forcing sequence শুরু হয় এক বা একাধিক ঘুটি বিসর্জন (sacrifice) দিয়ে। তাই সঠিক গণনা না করতে পারলে অকারণে ঘুটি বিসর্জন দেওয়ার জন্য আপনি খেলা হেরে যাবেন।
  7. ফোর্সিং চাল এর লিস্ট ঠিক এরকম ১/কিস্তি (check)২/ ঘুটি খাওয়া (capture) ও ৩/ বিপজ্জনক চাল (direct threat of check/mate, capture etc). প্রথমটা সবচেয়ে বেশি ফোর্সিং, তারপর কম ফোর্সিং – ইত্যাদি।
  8. কোন ফোর্সিং চাল কাজে লাগিয়ে ঘুটি জিতে নেওয়া যাচ্ছে তা দেখুন। দুটো চাল পরপর কাজ না করলে চালগুলোকে আগে-পরে করে দেখুন। অনেক সময় আগের চাল পরে করলে forcing move sequence কাজ করে।
  9. কোন ফোর্সিং সিকোয়েন্সে আপনার শেষ পর্যন্ত লাভ হচ্ছে না এমন মনে হলে অকারণ ঘুটি বিসর্জন দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  10. ফোর্সিং সিকোয়েন্স এর প্রথম চাল দেওয়ার আগে যতদূর সম্ভব গণনা করার চেষ্টা করুন। এবং সিকোয়েন্স এর শেষ প্রান্তে পৌছে আপনার পজিশন ভালো হবে, এবং যতটা বিসর্জন দিচ্ছেন তার চেয়ে বেশি কিছু ফেরত পাবেন এটা এটা নিশ্চিত হয়ে তবেই প্রথম চাল টা খেলুন।

উপরের পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কিভাবে পাজল সমাধান করা যায় তা বুঝতে নিচে ভিডিও দেখুন।

সবার শেষে, good luck!  কম্বিনেশন/tactics সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অভ্যাসের দরকার। অভ্যাস করার জন্য সেরা জায়গার ঠিকানা নিচেঃ

www.chesstempo.com/tactics

এখানে যত খুশি পাজল অভ্যাস করতে পারবেন আপনার খেলার মান দেখে সেই অনুয়ায়ী আপনাকে পরের puzzle টা দেওয়া হয়। যত পাজল এর সঠিক সমাধান করবেন আপনার পরের পাজল তত কঠিন হতে থাকবে। বড্ড বেশি কঠিন পাজল আপনি সমাধান করতে না পারলে পরের টায় একটু সহজ পাজল দেওয়া হয়। খেলায় দ্রুত উন্নতির জন্য নিয়মিত ১৫-৩০ মিনিট পাজল সমাধানের চেষ্টা করুন।

প্রত্যেক দাবা খেলোয়াড় নিয়মিত পাজল সমাধান করেন। একজন ফুটবলারের নিজের ফিটনেস বজায় রাখতে যেমন নিয়মিত জিমে যাওয়া/শরীরচর্চা দরকার, একজন দাবা খেলোয়াড় এর ঠিক একই কারনে নিয়মিত পাজল সমাধান অভ্যাস করা দরকার।

নিয়মিত ইন্টারনেটে আসা সমস্যার মনে হলে কোন পাজল বই ব্যবহার করতে পারেন। আমার কাছে কিছু পাজল বই আছে। বই চাইলে আমাকে জানান, ebook পাঠিয়ে দেবো।

 

Comments

comments

About the author

রাজীব মন্ডল

আমি একজন রসায়নের গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট, কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে স্নাতক ও কানপুর আই আই টি থেকে স্নাতকোত্তর পাঠক্রম শেষ করার পর বর্তমানে মার্কিন মুলুকে জৈব রসায়ন নিয়ে গবেষণারত। দাবা নিয়ে উৎসাহী। উতসাহবশত অনেক পড়াশুনা করেছি। স্কুল কলেজ জীবনে এক আধটা টুর্নামেন্ট খেলেছি, তবে সেগুলোকে খুব সিরিয়াস টুর্নামেন্ট বলে চলে না। তার বাইরে খেলা বলতে ইন্টারনেটে নিয়মিত খেলি এবং তার বাইরে চর্চা ও করি। তবে ইন্টারনেটের বাইরে খুব একটা খেলিনা, বা কোনো খেতাব নেই। পুরোটাই স্ব-শিক্ষা, কোনোদিন অন্য কারো কাছ থেকে তালিম নিইনি, তবে খেলা শেখার পথে বহু লোকের লেখা পড়েছি, যাদের কে আমার শিক্ষক বলা চলে, কারন তাদের ছাড়া খেলা শেখা আমার পক্ষে সম্ভবপর হতো না।

Leave a Reply