«

»

নভে. 25

প্রোটিনের গাঠনিক জীববিজ্ঞান, লেকচার ৪: গাঠনিক নির্মাণরীতি

[পূবর্ের লেকচার] [নিবন্ধন ফর্ম] [কোর্সের মূল পাতা]

আজকের লেকচারটিতে পড়ানো হয়েছে প্রোটিনের গাঠনিক নির্মানরীতি এবং বিভিন্ন ধরনের গাঠনিক প্যাটার্ন নিয়ে। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠনে হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিডগুলি কোথায় থাকে, কিভাবে থাকে, কার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে; ত্রিমাত্রিক গঠনের মধ্যে মোটিফ, ফোল্ড, ডোমেইন; প্রোটিনের গাঠনিক বিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই লেকচারে। ভিডিও লেকচারে অনেকগুলি উদাহরন দেয়া হয়েছে যেগুলি লিখিত লেকচারে উল্লেখ করা নেই। সেজন্য দয়া করে ভিডিওটি দেখে নেবেন।

 

 

১। যারা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না তাদের জন্য বিকল্প লিংক।

২। যারা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না তাদের জন্য বিকল্প লিংক।

 

গাঠনিক নির্মাণরীতি:

প্রাথমিক গঠন বা পলিপেপটাইড চেইন (এমিনো এসিড চেইন) থেকে একটি প্রোটিন কিভাবে বা কি কি নিয়ম মেনে ত্রিমাত্রিক গঠনে পৌঁছুবে, এবং কি কি ধরনের গঠন ও সম্পর্ক তৈরি করবে সেটা আলোচনা করাকেই গাঠনিক নিমর্ানরীতি বোঝানো হয়েছে।

 

ক) প্রোটিনের ফোল্ডিং বা ভাঁজ হওয়ার রীতিনীতি

নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে একটি পলিপেপটাইড চেইন প্রথমে দ্বিতীয় মাত্রার গঠন লাভ করছে (a, b), তারপর কিছু দ্বিতীয় মাত্রার গঠন মিলে কিছু নির্দিষ্ট আকার নিয়েছে (c, d) এবং পরবতর্ীতে বিভিন্নভাবে ভাঁজ বা ফোল্ড হয়ে একটি গ্লোবিউলার গঠন ধারন করছে (e)।

 

এখন এইরকম একটি ত্রিমাত্রিক গঠনে পৌঁছুতে পলিপেপটাইড চেইনটি কি কি ব্যপার বিবেচনা করে? সবচেয়ে সামনে যেই ব্যপারটি চলে আসে তা হল হাইড্রোফোবিক এবং হাইড্রোফিলিক বা পোলার ও চার্জড এমিনো এসিডের অবস্থান ত্রিমাত্রিক গঠনের কোথায় হয় তার একটি সাধারন রীতি। আমরা জানি প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ২১ টি এমিনো এসিডের মধ্যে (দ্রুত নেটে খুঁজে দেখে ফেলুন) ৮টি হল হাইড্রোফোবিক (নন-পোলার), মানে এরা পানির আশেপাশে থাকতে চায়না, পানি দেখলেই এদের গা জ্বালা করা টাইপ ব্যাপার। আর বাকি এমিনো এসিডগুলি পানির আশেপাশে থাকতে পারে (পোলার)। ঝামেলা হল জীবদেহ আর জীবকোষ পানি দিয়ে ভর্তি। সেজন্য একটি পলিপেপটাইড চেইনকে এমনভাবে ভাঁজ হতে হবে যেন হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিডগুলি পানির অণুর সংস্পশর্ে না আসতে পারে। নিচের ছবিটি দেখুন।

 

 

দেখুন কিভাবে হইড্রোফোবিক এমিনো এসিডগুলিকে (নন-পোলার) ত্রিমাত্রিক গঠনের ভিতরে জড়ো হয়েছে আর হাইড্রোফিলিক এমিনো এসিডগুলি (পোলার) বাইরের দিকে আছে যেখানে পানি আছে। এবার একটি উদাহরন দেখি সত্যিকারের একটি প্রোটিন দিয়ে। নিচের ছবিতে ফেরেটিন নামক একধরনের প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন দেখানো হয়েছে। ডানপাশের ছবিতে তৃতীয় মাত্রার গঠন দেখানো হয়েছে প্রোটিনটির কার্টুন রিপ্রেজেন্টেশান এর মাধ্যমে। মাঝখানের এবং ডানপাশের ছবি দুইটি তে একই গঠন দেখানো হয়েছে এমিনো এসিডগুলোর অবস্থান দিয়ে। তবে বলের মত প্রোটিনটির উপরের অংশটি কেটে দেখানো হয়েছে যেন মাঝখানটা দেখতে পাই। এখানে হলুদ এমিনো এসিডগুলো হল হাইড্রোফোবিক আর নীল এবং গোলাপী হল হাইড্রোফিলিক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে হলুদ এমিনো এসিডগুলি প্রায় দেখাই যাচ্ছেনা (মাঝখানের ছবিতে) অথবা প্রোটিনের মধ্যখানে আছে (ডান পাশের ছবিতে)। আর নীল বা গোলাপী এমিনো এসিডগুলি বাইরের সারফেস ঘিরে রেখেছে, মানে যেখানে পানির উপস্থিতি আছে।

 

 

আসলে প্রোটিনগুলি এমনভাবে ভাঁজ হয় যাতে তার কোন পরিবেশে অবস্থান করা সবচেয়ে সুবিধাজনক (energetically favourable)। যেমন আরেকধরনের প্রোটিনের কথা এখন বলব যারা তাদের বাইরের দিকটাতে হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিড রাখে। এরা হল একধরনের ট্রান্সপোটর্ার বা পরিবহনে সাহায্য করে এমন প্রোটিন। এরকম অনেকগুলি প্রোটিনের উদাহরণ নিচের ছবিতে দেয়া আছে। এই পরিবারের প্রোটিনগুলি একধরনের বেটা স্ট্র্যান্ড দিয়ে তৈরি ব্যারেল যারা কোষ আবরণীর মধ্যে প্রোথিত থাকে এবং যাদের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন অণু কোষের ভিতরে এবং বাইরে চলাচল করতে পারে।

 

 

কিন্তু কোষ আবরণী হল ফসফোলিপিডের দুইটি স্তর দিয়ে তৈরি। উপরের ছবিটির নিচে বামদিকে দেখানো হচ্ছে ফসফোলিপিডের দ্বিস্তর। যেখানে একটি ফসফোলিপিডের বলটি হল হাইড্রোফিলিক বা পোলার, অর্থাৎ পানির সংস্পর্শে আসতে পারে; আর লেজের মত অংশ দুইটি হল ফ্যাটি এসিড যারা হাইড্রোফোবিক। সেজন্য একটি কোষ আবরণীর ভেতরের অংশটুকু পুরোপুরি হাইড্রোফোবিক অংশ দিয়ে তৈরি। আর সেজন্য, বেটা ব্যারেল প্রোটিনগুলির বাইরের দিকে হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিড থাকে যারা হাইড্রোফোবিক ফ্যাটি এসিডের সংগে সম্পর্ক তৈরি করে। আর ব্যারেলের ভিতরের দিকে থাকে হাইড্রোফিলিক বা পোলার এমিনো এসিড, কারন ব্যারেলের ভিতর দিয়ে পানির সঙ্গে বিভিন্ন অণু যাতায়াত করে। এবার যদি একটি ব্যারেলের উপর থেকে নিচের দিকে তাকাই তবে এমিনো এসিডের অবস্থানগুলি নিচের ছবির মত দেখতে পাবো। এখানে হলুদ, নীল এব সাদা এমিনো এসিড দিয়ে যথাক্রমে হাইড্রোফোবিক, হাইড্রোফিলিক এবং অন্যান্য এমিনো এসিড বোঝানো হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে ভিতরের দিকে নীল এমিনো এসিড বেশি এবং বাইরের দিকে হলুদ এমিনো এসিড বেশি পরিমানে আছে।

 

 

আবার কখনো কখনো কোন প্রোটিনের গঠন এমন হয় যে এর হাইড্রোফোবিক এমিনো এসিডের অংশগুলো উন্মুক্ত থাকে। যেমন ডেকোরিন প্রোটিন। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই প্রোটিনের একদিক (কনকেইভ) বেটা শিট দিয়ে তৈরি। আসলে এখানে লিউসিন নামক এমিনো এসিড ভর্তি আর সেজন্য প্রোটিনের এই দিকটা হাইড্রোফোবিক। আর কনভেক্স দিকটা হাইড্রোফিলিক।

 

 

কিন্তু আগেই বলেছি, কোষে পানিযুক্ত সাইটোপ্লাজমে হাইড্রোফোবিক অংশটুকু উন্মুক্ত থাকতে পারেনা। সেজন্য এই প্রোটিন একধরনের পদ্ধতির আশ্রয় নেয় হাইড্রোফোবিক অংশটুকু ঢেকে রাখতে। নিচের ছবিটি দেখুন। একটি ডেকোরিন প্রোটিন আরেকটি ডেকোরিন প্রোটিন অণূর সঙ্গে লিউসিন দিয়ে হাইড্রোফোবিক সম্পর্ক তৈরি করে। ফলে হাইড্রোফিলিক অংশগুলি উন্মুক্ত থাকে, কিন্তু হাইড্রোফোবিক অংশগুলি ডাইমার টির ভিতরে থাকে।

 

 

খ) মোটিফ, ফোল্ড, ডোমেইন:

প্রোটিনের তৃতীয় পর্যায়ের গঠনের ভেতরেই আবার কিছু অণূগঠন তৈরি হয় যেগুলিকে মূলতঃ তিনটি টার্ম দিয়ে বোঝানো যায়। এরা হল মোটিফ, ফোল্ডিং এবং ডোমেইন। এসব নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করবো।

 

মোটিফ:

দ্বিতীয় মাত্রার গঠনগুলি প্রায়ই একটি নির্দিষ্ট ধরনের গঠন তৈরি করে যেগুলি একই ধরনের প্রোটিনে বার বার গাঠনিকভাবে দেখা যায়। একই ধরনের মোটিফ সাধারনত একই ধরনের কাজ সম্পাদন করে। নিচের ছবিটিতে বিভিন্ন ধরনের মোটিফের উদাহরন দেয়ে হল। মোটিফগুলি শুধু আলফা হেলিক্স দিয়ে তৈরি হতে পারে, বা শুধু বেটা স্ট্র্যান্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে অথবা দুইটার মিশ্রণেও তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনে এরকম উল্লেখিত বিভিন্ন গাঠনিক মোটিফ আমরা প্রচুর পরিমানে দেখতে পাবো। সেজন্য এদের সম্বন্ধে মোটামুটি ধারনা রাখাটা প্রয়োজনীয়। কয়েকটি বিখ্যাত মোটিফের নাম জিংক ফিঙ্গার মোটিফ, হেলিক্স-টার্ন-হেলিক্স মোটিফ ইত্যাদি। ভিডিও লেকচারের এদের কাজের উদাহরন দেয়া আছে।

 

 

ফোল্ড:

ফোল্ড হল একটি সার্বিক প্রোটিন বা এর কিছু অংশ (ডোমেইন, পরের অংশ দ্রষ্টব্য) ভাঁজ বা ফোল্ড হয়ে সার্বিকভাবে কিধরনের গঠন লাভ করে তাকে বোঝানোর জন্য একটি টার্ম। যেমন বেটা ব্যারেলের কথা উপরে উল্লেখ করেছি। নিচে আরও কিছু উদাহরন দেয়া আছে। একই ধরনের প্রোটিনের (যারা একই কাজ করে বা একই ধরনের সিকোয়েন্স থেকে গঠিত) ফোল্ড সাধারনত একইরকম হয়।  উদাহরন ভিডিও লেকচারে দেয়া আছে।

 

 

ডোমেইন:

ডোমেইন হল একটি প্রোটিনের মধ্যে নিজে নিজে ফোল্ড হয়ে একটি গ্লবিউলার গঠন তৈরি করে এমন অংশ। মানে একটি ডোমেইন কখনো কখনো একটি প্রোটিনের মত কাজ করতে পারে। সাধারনত ভিন্ন ভিন্ন ডোমেইন একটি প্রোটিনের ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে। আবার কখনো দুইটি ডোমেইন মিলে একটি নির্দিষ্ট কাজ একসাথে করতে পারে। নিচে ছবিটি দেখুন। এই প্রোটিনের নাম পাইরুভেট কাইনেজ। এর তিনটি সুস্পষ্ট ডোমেইন তিনটি রঙে দেখানো হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন ডোমেইনগুলি গ্লবিউলার গঠন তৈরি করেছে এবং একটির সঙ্গে একটি কিছু ছোট লুপ দিয়ে যুক্ত। এখন পর্যন্ত জানা প্রোটিন হিসেব করলে ডোমেইন সাধারনত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ২০০টি এমিনো এসিডের চেয়ে বড় হয়না। গড়ে এর আকার ১০০টি এমিনো এসিডের মত দেখা যায়। উদাহরন ভিডিও লেকচার থেকে দেখে নিন।

 

 

গ) টপোলজি, প্রোটিন ফোল্ড ফ্যামিলি এবং সুপার ফ্যামিলি

একটি প্রোটিনের ফোল্ড এবং ডোমেইনের  যোগাযোগকে এবং সার্বিক ত্রিমাত্রিক গঠনকাঠামোকে সেই প্রোটিনের টপোলজি বলে।

একই ধরনের প্রোটিনের ফোল্ড একই রকম হবে এবং এদেরকে সেজন্য একটি পরিবারে অন্তভর্ূক্ত করা যাবে যাকে ফোল্ড ফ্যামিলি বলা যায়। যেমন, সবগুলি প্রোটিন যাদের বেটা ব্যারেল ফোল্ড আছে তারা বেটা ব্যারেল ফোল্ড ফ্যামিলির অন্তর্গত হবে।

আবার যখন কোন এরকম ফ্যামিলির সদস্য প্রোটিনগুলোকে আমরা বিভিন্ন জীবে পাই তখন এদের গঠনকে বিবর্তনিকভাবে ব্যাখা্যা করা যায়। যেমন, সরল জীবে একটি প্রোটিন জটিল জীবে কিভাবে কাজ করে, কিধরনের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য বহন করে বা বিভিন্নতা কিকি হয় এসব আলোচনা করা যায়। তখন পুরো ফ্যামিলিকে আমরা সুপার ফ্যামিলি বলতে পারি। যেমন, কাইনেজ প্রোটিন বিভিন্ন ধরনের জীবে পাওয়া যায় যাদের ফোল্ড মোটামুটি একইরকম। তাই কাইনেজ হল একটি প্রোটিনের সুপার ফ্যামিলি। এসব নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আরও আলোচনা করবো।

 

ঘ) প্রোটিনের গাঠনিক বিবর্তন

আজকের লেকচার শেষ করছি একটি প্রোটিন ফ্যামিলির গাঠনিক বিবর্তন নিয়ে কিছু আলোচনা করে। যেই ফোল্ড ফ্যামিলিটির কথা বলবো তাকে বলা হয় β-CASP ফ্যামিলি। নিচের ছবিতে তিনটি ভিন্ন জীবের এই ফ্যামিলির তিনটি প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন দেখানো হয়েছে। এর নিচে এই ফ্যামিলির বিভিন্ন সদস্যের প্রাথমিক গঠনে ডোমেইন গুলো কিভাবে থাকে সেটা প্রদর্শিত। একেকটা ডোমেইনের রঙ একেক রকম। ত্রিমাত্রিক ছবির গঠন তিনটি যথাক্রমে আর্কিয়া (PH1404), ব্যাকটেরিয়া (TTHA0252) এবং মানুষের (CPSF-73)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তিনটি প্রোটিনেরই গঠন কাঠামো একই ফোল্ড ধারন করেছে। মানুষের এই প্রোটিনের কাজ আমরা জানি এবং কিভাবে এরা কাজ করে সেটাও বের করা হয়েছে। এখন যদি আর্কিয়া এবং ব্যাকটেরিয়াতে এই প্রোটিন কিভাবে কাজ করে সেটা বের করতে চাই তবে সেটা বোঝা সহজ হবে। কারন আমরা জানি মানুষে এরা কিভাবে কাজ করে। এভাবে গঠন দিয়ে একটি প্রোটিনের বিবর্তনিক সম্পর্ক বের করে আমরা সেই প্রোটিন ফ্যামিলির সব প্রোটিন সম্বন্ধে একটা সাধারন ধারনা করতে পারি।

 

Comments

comments

About the author

খান ওসমান

আমি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার জেনেটিক্স এর একজন পিএইচডি ছাত্র। কাজ করছি ম্যালেরিয়া জীবাণুর একধরনের প্রোটিন নিয়ে। আমার কাজ মূলতঃ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়, এর সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্পর্ক নির্ধারণ এবং ঔষধ তৈরিতে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। স্নাতক এবং মাস্টাসর্ ডিগ্রী অজর্ন করেছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞান নিয়ে। আমার বতর্মান ল্যাব এর ওয়েবসাইটে ঢু মেরে দেখতে পারেন এখানে: www.thesgc.org.

Leave a Reply