«

»

সেপ্টে. 11

ফাইন্যান্স ১০১ – অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি: ক্লাস-৩

এখানে কোর্সে নিবন্ধন করুন

কোর্স পরিচিতি দেখুন

 

দুঃখ প্রকাশ: ভয়ানক ব্যস্ততার কারণে গত সপ্তাহের নিয়মিত ক্লাস লেকচার আপলোড করতে পারিনি বলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এই সময়টাতে আমার পরীক্ষা চলেছে (সাথে পেশাগত ব্যস্ততা তো ছিলই) এটা জেনে বিলম্বটাকে যদি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন তবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবো।

 

ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রগুলো: পর্ব-২ (ব্যবসায়িক ফাইন্যান্স/অর্থায়ন)

ফাইন্যান্স ১০১: অর্থবিজ্ঞান পরিচিতি কোর্সের তৃতীয় ক্লাসে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। আগের ক্লাসে আমরা ফাইন্যান্সের ব্যবহারের ক্ষেত্র বিচারে একে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলাম এবং ব্যক্তিগত ফাইন্যান্স/অর্থায়ন সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজ আমরা ফাইন্যান্সের ব্যবহারের দ্বিতীয় ক্ষেত্র: ব্যবসায়িক বা বিজনেস ফাইন্যান্স সম্পর্কে জানবো।

ব্যবসায়িক ফাইন্যান্স (Business Finance):

একটি ব্যবসা শুরু করতে মূলত: তিনটি উপাদানের দরকার হয়: ১. উদ্যোক্তা ২. একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া বা ধারণা এবং ৩. অর্থ। সুতরাং অর্থ ছাড়া ব্যবসার চিন্তা করাটাই বৃথা। মূলধন বিনিয়োগ করা ছাড়া কোন ব্যবসাই সম্ভব না, তা সে ছোট বা বড় যে ব্যবসাই হোক না কেন। আপনি যদি একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শুরু করেন তাতেও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, আবার যদি একটি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন সেটাতেও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন – ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা এধরণের আরও অনেকে আছে যারা নিজেরা সেবাপ্রদান করে অর্থ উপার্জন করে, তাতে তো অনেক সময় সেরকম অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না! কথা ঠিক, তবে বুঝতে হবে, এধরণের কাজ যারা করে তাদের আমরা বলি পেশাজীবি; অর্থাৎ তারা নিজেদের শিক্ষাগত বা অন্য দক্ষতা কাজে লাগিয়ে উপার্জন করে – এটা ব্যবসা না। হ্যা, যদি একজন ডাক্তার অর্থ বিনিয়োগ করে একটি চেম্বার করেন, তাতে বেতনভুক্ত কিছু ডাক্তার এবং কর্মচারী নিয়োগ দেন – সেটাকে আমরা ব্যবসা বলতে পারি।

রতনের সাহেব কোন ব্যবসাতে নামবে:

এবার দেখি ব্যবসাতে ফাইন্যান্সের ব্যবহার কীভাবে হয়। ধরি রতন নামে এক ব্যক্তি চিন্তা করছেন তিনি ব্যবসা করবেন। অনেক ভাবনা চিন্তার পর তিনি দুটি ব্যবসার খোঁজ পেলেন – প্রথমটি হল কাপড়ের ব্যবসা, ইসলামপুর থেকে পাইকারি কাপড় কিনে সেটা তার এলাকায় খুচরা বিক্রি করা যায়। আর দ্বিতীয়টি হল রেস্টুরেন্টের ব্যবসা। রতন সাহেব এ দুটি ব্যবসার সম্পর্কে খোজখবর করে জানতে চাইলেন কোনটাতে কেমন লাভ হবে। এবং তিনি দেখলেন কাপড়ের ব্যবসাতে শতকরা ৩৫% লাভ এবং খাবারের ব্যবসাতে ৩০% লাভ। তাই তিনি ঠিক করলেন তিনি কাপড়ের ব্যবসা করবেন এবং তার চাকরি জীবনের সঞ্চয় ১০০ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিলেন। এই যে তিনি দুটি ব্যবসা খুজে বের করলেন, তাদের মধ্যে কোনটাতে কেমন লাভ তা বের করলেন এবং যেটাতে বেশি লাভ সেই ব্যবসাটা করার সিদ্ধান্ত নিলেন – এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে ফাইন্যান্সের ভাষায় বলে ক্যাপিটাল বাজেটিং (Capital Budgeting)

রতন সাহেবের ব্যবসা বাড়ছে:

কিছুদিন পরের কথা। রতন সাহেবের কাপড়ের ব্যবসা বেশ ভালই চলছে – তিনি এলাকায় সাপ্লাই দিয়ে কুলাতে পারছেন না। রতন সাহেব চিন্তা করলেন ব্যবসাটাতে যদি আরো কিছু মূলধন যোগানো যেতো তবে ব্যবসাটাও আরো বড় করা যেতো। তিনি যে ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন সেটাতে লাভের কিছুটা জুড়ে বর্তমানে তার মূলধন ১৫০ টাকা। ব্যবসা বাড়াতে যে অতিরিক্ত অর্থটা দরকার রতন সাহেব সেটার খোঁজে পার্শবর্তী ব্যাংকে গেলেন এবং সেখানে ঋণের আবেদন করে ৫০ টাকার পেলেন। তবে শর্ত হলো বছর শেষে ঋণের টাকা বাদেও শতকরা ২০% হারে ইন্টারেস্ট ফেরত দিতে হবে। এখন রতন সাহেবের ব্যবসাতে মোট বিনিয়োগের পরিমান দাড়ালো ২০০ টাকা, – মানে তিনি তার মূলধনের গঠন বা ক্যাপিটাল স্ট্রাকচার (Capital Structure) পরিবর্তন করলেন।

বেশি লাভ করতে কে না চায়:

বছর শেষে রতন সাহেব ব্যবসা করে ৭০ টাকা আয় করলেন (৩৫%)। এর থেকে ইন্টারেস্ট হিসেবে ব্যাংকে দিলেন ১০ টাকা এবং তার নিজের মুনাফা হিসেবে রইল ৬০ টাকা। এবার তিনি হিসেব করতে বসলেন তার শতকরা কত লাভ হল। হিসেব কষে রতন সাহেবের তো চোখ কপালে ওঠার জোগার। ব্যাংকে ইন্টারেস্ট দিয়ে তার মুনাফা ৬০ টাকা, আর এ টাকা আয় করতে নিজের মূলধন খাটিয়েছেন ১৫০ টাকা।অর্থাৎ তার লাভের হার হল (৬০ ÷ ১৫০) = ৪০%! তার জানামতে এই ব্যবসাতে লাভ হবার কথা ৩৫%, ব্যবসাও সেরকমই হয়েছে। তিনি ১০০ টাকার জিনিষ ১৩৫ টাকাতেই বিক্রি করেছেন। তারপর তিনি বুঝতে পারলেন, যেহেতু তিনি এবার ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসাতে খাটিয়েছেন – তাতেই লাভের পরিমান বেড়েছে। কারণ ব্যাংককে তিনি ফেরত দিয়েছেন ২০% হারে কিন্তু তার লাভ হয়েছে ৩৫%। তার নিজের মূলধন তো আর বাড়েনি, ফলে তার লাভের পরিমান বাড়ার সাথে সাথে লাভের শতকরা হারও বেড়ে গেছে।

এই ব্যাপারটাকে আমরা ফাইন্যান্সের ভাষায় বলি লেভারেজ (Leverage) বা ফাইন্যান্সিয়াল লেভারেজ। ধনাত্মক বা পজিটিভ লেভারেজের সৃষ্টি হয় যখন ঋণ গ্রহন করে আপনি কোন ব্যবসায়ে খাটান এবং ব্যবসার লাভের হার -ঋণের খরচ বা ইন্টারেস্ট রেটের থেকে বেশি থাকে। যতক্ষণ পজিটিভ লেভারেজ থাকবে ততক্ষণ আপনি যত বেশি ঋণ নিয়ে ব্যবসাতে খাটাবেন তত আপনার লাভের হার বাড়তে থাকবে। লেভারেজের ব্যাপারটা অনেকটা এরকম: ধরেন আপনি নিজ হাত দিয়ে ৩০ কেজির ওজন সরাতে পারেন। যতই চেষ্টা করেন এর বেশি ওজন (ধরি ৩৫ কেজি) আপন নিজে সরাতে পারবেন না। মূলধনের ব্যাপারটাও অনেকটা এমন, একজন ব্যক্তির পক্ষে একটি নিদির্ষ্ট পরিমানের বেশি মূলধনের যোগান দেয়া সম্ভব না – সে যত ধনী ব্যক্তিই হোক না কেন। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে তা থামবেই থামবে কারন মানুষের ক্ষমতার একটা সীমা আছে। এখন ধরি আপনি একজনের কাছ থেকে একটি লাঠি ধার নিলেন। এবার একটা ইট মাটিতে রেখে তার ওপর লাঠিটি বসিয়ে লাঠির এক প্রান্ত সেই ৩৫ কেজি ওজনের নিচে দিলেন এবং অন্য প্রান্ত হাতে ধরলেন – এতে একটি লিভার (Lever) তৈরি হল। এবার আপনি মাটির দিকে চাপ দিতেই ৩৫ কেজি ওজনটি সরে গেল যেটা আপনি এতক্ষণ সরাতে পারছিলেন না। ফাইন্যান্সিয়াল লেভারেজও অনেকটা এভাবেই কাজ করে।

অতি লোভে তাঁতী কতটা নষ্ট হয়:

তাহলে লেভারেজের মাধ্যমে কি সবসময়ই ব্যবসার লাভের হার বাড়ানো যাবে? তা কিন্তু না – আমি আগেই বলেছি ধনাত্মক বা পজিটিভ লেভারেজের ক্ষেত্রে লাভের হার বাড়বে। তবে যদি আপনি ঋণ নিয়ে এমন ব্যবসাতে খাটান যেখানে ঋণের ইন্টারেস্টের চাইতে লাভের হার কম, সেটা ঋণাত্মক বা নেগেটিভ লেভারেজের সৃষ্টি করবে এবং যতক্ষণ এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে ততক্ষণ আপনার লাভের হারকে দ্রুত নিজের দিকে নামিয়ে আনবে। আর আপনি লোন নিয়ে যদি লোকসানি প্রকল্পে খাটান তবে তো সর্বনাশ! তাই যে ব্যবসাতে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করবেন তার রিটার্ন কেমন সেটা বিবেচনা করেই ঋণ নেয়া উচিৎ। আমাদের দেশে অনেকেই বিনিয়োগের রিটার্নের কথা চিন্তা না করেই ঋণ নিয়ে বসে এবং লোকসানি খাতে বিনিয়োগ করে ঋণ না নিলে যতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হতো তার চাইতে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। এই যে ব্যবসাতে লাভ কম হওয়া বা ক্ষতির যে সম্ভনা তাকেই আমরা ঝুঁকি বা Risk বলছি।

 

এতক্ষণ আমরা ব্যবসাতে ফাইন্যান্সের ব্যবহার খুবই সাধারণ কিছু উদাহরণের মাধ্যমে জানলাম। ব্যবসায়িক ফাইন্যান্সকে ব্যবসার আকার ভেদে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়: ১. ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসার অর্থায়ন বা SME Finance এবং ২. বৃহৎ ব্যবসার অর্থায়ন বা Corporate Finance। মূল ব্যাপারগুলো এক হলেও এসএমই ফাইন্যান্স কিছুটা সহজ এবং কর্পোরেট ফাইন্যান্স এর ব্যাপ্তি অনেক বিশাল এবং জটিল।

যেহেতু এটা ফাইন্যান্সের পরিচিতিমূলক কোর্স তাই আমরা এতটুকুতেই থামবো। সামনের ক্লাস গুলোতে আমরা ফাইন্যান্সের আরো কিছু ধারণা ও বিষয়ের সাথে পরিচিত হবো। আশা করছি আজকের ক্লাসটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। সামনের ক্লাসগুলোতে আবার দেখা হবে আশা করছি। সবাই অনেক ভাল থাকবেন।

Comments

comments

About the author

Ali Haidar Khan (Tonmoy)

আমি আলী হায়দার খান; জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইটকাঠ - জনস্রোতের ঢাকায়। ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোন শেষে এসএসসি দিয়েছি লালমাটিয়া বয়েজ স্কুল থেকে আর এইচএসসি নটর ডেম কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে ব্যবসা প্রশাসনে (BBA) স্নাতক সম্পন্ন করেছি । বর্তমানে বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি এবং সেই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউট - IBA তে MBA করছি । মুক্তজ্ঞানের সাথে আমার সখ্য ২০০৪ সাল থেকে, যখন আমি প্রথম উইকিপিডিয়ার সাথে পরিচিত হই এবং এরই ধারাবাহিকতায় একসময় উইকিপিডিয়ার অবদানকারী হয়ে উঠি। আমি উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর একজন প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রেজারার। উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের সাথেও এখন সম্পৃক্ত আছি । প্রকৃতি আমার কাছে অতি প্রিয়, বিশেষ করে পাহাড় আর বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে খুবই ভাল লাগে । তাই আমি সময়-সুযোগ পেলেই হুটহাট বেড়িয়ে পড়ি।

3 pings

    Leave a Reply