«

»

আগস্ট 13

তড়িৎকৌশল পরিচিতি – লেকচার ০

কোর্স পরিচিতি ও নিবন্ধনের ফর্ম।
সবাইকে আবারো স্বাগতম জানাচ্ছি।

 

আমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তড়িৎকৌশলকে পেশা হিসেবে নেব, তড়িৎকৌশলীরা  আসলে কি করে, বা কিভাবে এই বিদ্যা কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে আমার ধারণা খুবই সীমিত ছিল। মূলত: পদার্থবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে এবং  ইলেক্ট্রনিক্স ও কম্পিটারে আগ্রহ থাকায়  আমার কাছে এই ক্ষেত্রকে বেশ  আকর্ষণীয় মনে হয়।  ইঞ্জিনিয়ারিং ১০১ এ  তড়িৎকৌশলের বিভিন্ন দিক ও এর ব্যাপ্তি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাই। আজকে তড়িৎকৌশলকে পেশা হিসেবে নিলে কি কি ক্ষেত্রে অবদান রাখা সম্ভব তা নিয়ে আলোচনা করবো।

 

পরিচিতিমূলক ভিডিও বলে আজ কোনো কুইজ রাখছি না। পরের দিন থেকে (আগামী মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২১শে অগাস্ট)  আশা করছি কুইজ রাখতে পারবো।

 

তড়িৎকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্র :
১) বিদ্যুত উৎপাদন ও বন্টন (Power)
২) সয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন (Automatic Control Systems)
৩) সংকেত নিয়ন্ত্রন এবং যোগাযোগ (Signal Processing and Communication)
৪) ইলেক্ট্রনিক্স (Electronics)
৫) তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র (Electromagnetic Field)

 

স্লাইড:

ভিডিও দেখতে সমস্যা হলে নিচে ট্রানস্ক্রিপ্ট সংযোজন করে দিচ্ছি-

লেকচার ১

সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি।

তড়িৎ কৌশলের এই ছোট্ট কোর্সটিতে আমরা তড়িৎকৌশলের খুবই প্রাথমিক কিছু বিষয় ও ধারণা নিয়ে আলোচনা করবো।

 

আমি চেষ্টা করবো খুব গভিরে না গিয়ে বরং সহজভাবে তড়িৎ কৌশলের প্রাথমিক কিছু তত্ত্ব বা থিওরি তুলে ধরতে।

 

প্রথমেই প্রশ্ন আসতে পারে তড়িৎ কৌশল কি এবং কেন তড়িৎ কৌশল প্রয়োজন?

আমরা যদি আমাদের চারপাশে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে বর্তমান বিশ্বে প্রায় সবকিছুই কোনো না কোনো ভাবে বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল।

 

ঘরের লাইট জ্বালানো, কম্পিউটার চালানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারখানায় বড় বড় পাম্প, কম্প্রেসর ইত্যাদি চালানোর জন্য বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া টেলিফোন, টেলিভিশন মোবাইল ফোনের মতন দৈনন্দিন অবশ্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল।

 

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলতে হয়, বলতে পারি তড়িৎ প্রকৌশল হচ্ছে বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তড়িৎচৌম্বকীয় যে বল, তা নিয়ে গবেষণা করা ও তা থেকে প্রাপ্ত ধারণা ও অভিজ্ঞতাকে মানুষের উপকারে ব্যবহারের চেষ্টা করা।

 

তড়িৎ কৌশলের ব্যাপ্তি যেহেতু আজকে অনেক বড়, তড়িৎ কৌশলকে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়। আমি ঠিক জানি না প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নির্দিষ্ট কোনো ভাগ আছে নাকি, কিন্তু আমি তড়িৎ কৌশলকে সাধারণত একে এভাবে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে থাকি।

  •  বিদ্যুত উৎপাদন ও বন্টন (Power)
  •  সয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন (Automatic Control Systems)
  •  সংকেত নিয়ন্ত্রন এবং যোগাযোগ (Signal Processing and Communication)
  •  ইলেক্ট্রনিক্স (Electronics)
  •  তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র (Electromagnetic Field)

 

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্টনের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হচ্ছে জেনারেটর – যেখানে বিদ্যুৎকে উৎপন্ন করা হচ্ছে

এর পরে ট্রান্সফর্মার, তার ব্রেকার, সুইচ , ক্যাপাসিটার ইত্যাদি নানা ইলেক্ট্রিকাল ইকউপমেন্ট ব্যবহার করে বিদ্যুতকে মানুষের ঘরে বা কারখানায় বন্টন করাই হচ্ছে এই বিভাগের প্রধান কাজ। এই সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করাও এই ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের লক্ষ্য থাকবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর যতটা সম্ভব ইন্টারেপশন ছাড়া এবং সেইফ ভাবে এই বিদ্যুৎকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া।

 

এর পরে আসি সয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রনে। সয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন করার যন্ত্র সাধারণত বিভিন্ন সেনসরের সমণ্বয়ে গঠিত হয়। যেমন ধরুন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। ঘরের তাপমাত্রাকে একটি নির্দিষ্ট লেভেলে রাখতে যদি একটা নির্দিষ্ট সেটপয়েন্ট তৈরি করা হয়, তাহলে ঘরের  তাপমাত্রা যদি ঐ সেটপয়েন্ট এর উপরে উঠে যায় তাহলে যন্ত্রটি টেম্পারেচার সেন্সরের মাধ্যমে তা অনুধাবন করে এয়ার কন্ডিশনার ইউনিটকে চালু করে দিবে।

তারপর ধরুন সয়ংক্রিয় দরজা, মানুষ আসতে থাকলে সেন্সর তা সেন্স করে দরজা নিজে থেকে খুলে দিবে। আবার মানুষ পার হয়ে গেলে দরজা নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যাবে।

বিমানের অটোপাইলটের মতন ফাংশনও এর আরেকটি বড় উদাহরণ। অটোপাইলটের সফটঅয়্যার বিমানকে নিজে নিজে চালাতে পারে। বাতাসের গতি, বিমানের গতি, ভাইব্রেশন সেন্সর, দিক নির্দেশক ইত্যাদি অনেক কিছুর সমণ্বয়ে তৈরি হয় এমন জটিল একটা কন্ট্রোল সিস্টেম।

 

এরপরে আসি সংকেত নিয়ন্ত্রন এবং যোগাযোগ-এ । এই ক্ষেত্রটির সাথে প্রায় সবাই বেশ পরিচিত। টেলিভিশন, টেলিফোন, স্যাটেলাইট, মোবাইল ফোন এ সবই এই ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে। ডিজিটাল ছবি প্রসেস করার মতন পদ্ধতি কম্পিউটার সায়েন্সের সাথে খুব কাছাকাছি ভাবে জড়িত হলেও এর অনেক কিছুই ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং – তথা তড়িৎ প্রকৌশলের আওতায় পড়ে।

 

এর পরে আছে ইলেক্ট্রনিক্স। আজকাল হয়তো তড়িৎ কৌশল শুনলে সবার মাথায় আসে ইন্টেল অথবা অ্যাপল অথবা আই বি এম এর মতন কোম্পানির নাম। ইলেক্ট্রনিক্স শাখায় প্রধাণত সেমিকন্ডাক্টরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা ট্রান্সিসটর, ডায়োড, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ইত্যাদি জিনিস ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরি করা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর বা কম্পিউটারের হার্ডঅয়্যার তৈরি এই ক্ষেত্রের আওতায় পড়ে। এটা বোধহয় বর্তমান বিশ্বে তড়িৎ প্রকৌশলের সবচেয়ে গ্ল্যামারাস শাখা।

 

সবশেষে আছে তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটা তড়িৎচৌম্বকীয় আবেশের মতই অনেকটাই ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে কাজ করে। তাই এর অ্যাপ্লিকেশন আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা চোখে পড়ে না। জেনারেটরের গঠন,  ইলেক্ট্রিক মোটরের গঠন, ট্রান্সফর্মারের গঠন ইত্যাদিতে তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঝড়ো হাওয়ায় বিমানকে লাইটনিং বা বিদ্যুতের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য যে শীল্ডিং ব্যবহার করা হয় সেখানেও তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের অনেক তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়।

 

ভিডিওটি দেখার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এর পরের দিন চেষ্টা করব বিদ্যুত কেন ও কিভাবে এক জায়গা থেকে আরেক যায়গায় যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে।

Comments

comments

About the author

ডেভিড বিশ্বাস

পেশায় আমি তড়িৎ প্রকৌশলী। পড়াশোনা তড়িৎ প্রকৌশলের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রন) , কমিউনিকেশন (যোগাযোগ) এবং সিগন্যাল প্রসেসিং (সংকেত নিয়ন্ত্রন) শাখায় হলেও বর্তমানে আমি একটি পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যুত বন্টন ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নির্ভরশীলতা (Reliability) নিয়ে কাজ করছি।

এই সংক্ষিপ্ত কোর্সে আমি তড়িৎ প্রকৌশলের খুবই প্রাথমিক কিছু ধারণা ও উপকরণ তুলে ধরবার চেষ্টা করবো।

Leave a Reply